‘ভাইকে তো আর পাব না বিচার দেখে যেতে চাই’

প্রকাশিত: ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মুশফিকুর রহমান তুহিন হত্যার ৯ বছর চলে গেছে। গ্রাম্য বিরোধের জেরে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভোরে নেত্রকোনার আটপাড়ায় তুহিনের বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁর ওপর হামলা চালায় স্থানীয় কিছু লোক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মুশফিকুর রহমান তুহিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুলতান উদ্দিন আহমেদ। নিহত তুহিন একই উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর বাড়িতেই ছিলেন। তুহিন সাপ্তাহিক অপরাধ জগৎ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর চলে যাওয়ায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে মামলার বাদী ও মুশফিকের পরিবারের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বাদীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন পর আদালতে অভিযোগপত্র জমা হলেও আসামিরা সবাই জামিনে বাইরে আছেন। এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন।
এলাকাবাসী ও মুশফিকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার হাঁসকুরি বিল ইজারা নিয়ে মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কুতুবপুর ও নারাছাতল গ্রামের কয়েকজনের বিরোধ ছিল। এরই জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মুশফিকের বাড়িতে ঢুকে তাঁর ওপর হামলা চালায়। ঘটনার সময় ধস্তাধস্তিতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের তাজাত খাঁ ও আমীর খাঁ নামে দুই ব্যক্তি আহত হন। ঘটনার পরদিন নিহত তুহিনের বড় ভাই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে ২৭ জনকে আসামি করে আটপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। পরদিন পুলিশ আহত দু’জনসহ লক্ষ্মীপুর গ্রামের রহমত মিয়া ও বাবুল মিয়া নামে চার ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এর পর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।
তুহিন হত্যা মামলার তদন্তভার আটপাড়া থানা পুলিশের কাছ থেকে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর সিআইডিকে দেওয়া হয়। সিআইডি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। শেষে সিআইড ময়মনসিংহ বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান তদন্ত শেষ করে ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর ২২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার বাদী লুৎফর রহমান জানান, অভিযোগপত্রে হত্যায় জড়িতদের নাম বাদ পড়ায় আদালতে নারাজি দেওয়া হয়। আদালত তা মুঞ্জুর করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু ভাই হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। হত্যার ৯ বছরের বেশি সময় চলে গেলেও এখনও বিচার পাচ্ছি না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় আমরা এখন হতাশায় ভুগছি।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে।’