আফরিন আক্তারঃ
রাজধানীর মালিবাগের পৈতৃক বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন আনিসুজ্জামান খান। একদিন হঠাৎ তাঁর কাছে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের নোটিশ আসে। কাগজ হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে যান। কারণ, তিনি কোনো ঋণ নেননি। টাকা না পেয়ে এক পর্যায়ে আদালতে মামলা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।তদন্তে বেরিয়ে আসে, কাগজপত্রে আনিসুজ্জামান ঋণগ্রহীতা এবং তাঁর স্ত্রী ঋণের গ্যারান্টর হলেও স্বাক্ষরগুলো তাদের নয়। শেষে জানা যায়, তাঁর ছোট ভাই এ কে এম কামরুজ্জামান খান স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ওই ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক।
এ মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির ঢাকা মহানগরের বিশেষায়িত তদন্ত ও অভিযান শাখার (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) এসআই শাহীন মিয়া বলেন, মূলত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ভাইকে ঋণগ্রহীতা দেখিয়ে আইপিডিসি থেকে ঋণ নেন কামরুজ্জামান। পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা বলে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করেন। প্রথমে বিষয়টি ধরা পড়ার পর পারিবারিক পর্যায়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করে দেশত্যাগ করেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, কামরুজ্জামান খান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উপহারসামগ্রী সরবরাহের ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। এই ব্যবসার কাজে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ২০২২ সালের ২০ জুন থেকে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ পর্যায়ে ঋণের আবেদন ফরম, চুক্তিপত্র, সিগনেচার মিসম্যাচ-সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র ও পার্সোনাল গ্যারান্টি ফরমের স্বাক্ষরগুলোকে বিতর্কিত হিসেবে ধরা হয়। এই স্বাক্ষরগুলো প্রকৃতপক্ষে আনিসুজ্জামান খানের নাকি অন্য কারও, সিআইডির হস্তলিপি বিশারদদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। সেই সঙ্গে গ্যারান্টর হিসেবে দেওয়া স্বাক্ষর তাঁর স্ত্রী নীরা আক্তারের কিনা, তাও পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। হস্তলিপি বিশারদরা মত দেন, আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরগুলো করেছেন কামরুজ্জামান খান। নীরা আক্তারের স্বাক্ষরও অন্য কেউ দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আনিসুজ্জামান ও কামরুজ্জামানের মালিবাগ বাজার রোডের বাড়ি ছাড়াও মালিবাগের গুলবাগ এলাকায় ছয় কাঠার টিনশেড বাড়ি আছে। সেটিকে ডেভেলপারের সাহায্যে যৌথভাবে ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে সম্মত হয় পরিবার। এ নিয়ে ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি ও ওয়ারিশান সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার নামে কামরুজ্জামান মা ও ভাইবোনদের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। সেই সঙ্গে কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন।
আইপিডিসির তৎকালীন নির্বাহী মীর সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২০১৬ সালের আগস্টে ইউনিটি এন্টারপ্রাইজের ৩০ লাখ টাকার ঋণ তাঁর মাধ্যমে অনুমোদন হয়। ঋণের নথি ও চুক্তিপত্রে আনিসুজ্জামান ও গ্যারান্টর হিসেবে নীরা আক্তার স্বাক্ষর করেন বলে তিনি দাবি করলেও হস্তলিপি পরীক্ষায় সেটি আগেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে, আনিসুজ্জামান খানের ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে কোনো হিসাব নেই। আইপিডিসির সঙ্গে তাঁর লেনদেনও নেই। তিনি কোনো ব্যবসা করেন না। ইউনিটি এন্টারপ্রাইজের সব বিষয় কামরুজ্জামান পরিচালনা করেন। ইউনিটির বিরুদ্ধে আইপিডিসির করা কয়েকটি চেক ডিজঅনারের মামলাও তিনিই পরিচালনা করেছেন, আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।