ভারতীয় ট্রাক মালিকদের আন্দোলন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
ভারতের ফুলবাড়ী লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আন্দোলনের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর। বন্দরটিতে প্রায় ৯৫ শতাংশ পাথর আমদানি নির্ভর। মূলত ভারত ও ভুটান থেকে পাথরগুলো আমদানি হয়ে থাকে। ভারতের পর কয়েকদিন ধরে ভুটানের পাথরও আসছে না বন্দরটিতে।
ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থলবন্দরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পাথর না আসায় একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট হাজারের বেশি শ্রমিক।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বন্দরটিতে ঘুরে দেখা গেছে, স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে পুরো ইয়ার্ড ফাঁকা। তিনদিন ধরে ভুটান থেকে পাথর না আসার কারণেই পুরো ইয়ার্ড ফাঁকা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গত বছর ১৮ নভেম্বর থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে বন্দরটিতে। পাথর নির্ভর বন্দরটিতে ভারতের পাথর আসা বন্ধ থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে ভুটানের পাথরেই চলছিল বন্দরের ব্যবসা ও শ্রমিকদের কার্যক্রম। পাথর না আসায় স্থলবন্দরের পাথরের সাইটগুলোতেও শ্রমিকের পরিমাণ কম লক্ষ্য করা গেছে।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে আসা ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে আবার আন্দোলন শুরু করেছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভুটানের সঙ্গে ভারত সরকারের চুক্তি থাকায় কোনো স্লট ফি দিতে হয় না। এ কারণে ভুটানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের চলমান অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে ভুটান যাতে নিয়মের আওতায় এসে বাংলাদেশের কাছে পাথর রপ্তানি করতে না পারে এমন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। অথচ ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ফুলবাড়ী স্থলবন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের কাছে পণ্য রপ্তানিতে ভুটানকে কোনো অনলাইন ফি দিতে হয় না। তবে ভারতীয় ট্রাক মালিক সংগঠনের দাবি, তারা সুবিধা পোর্টালের আওতায় এলে ভুটান কেন নয়, এমন দাবিতেই তারা আন্দোলন করছে বলে জানা গে
এর আগেও গত ২০২৩ সালের ৫ জুলাই ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে আন্দোলনের কারণে টানা এক মাস ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গাড়িগুলোকে রাজ্য সরকারকে ৬ চাকার ট্রাক প্রতি ৩ হাজার এবং ১০-১২ চাকার ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ভুটানের গাড়ির ক্ষেত্রে সেটি দিতে হয় না। এ কারণে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে আন্দোলনে নামেন ভারতীয় ট্রাকচালকেরা।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা থাকায় ব্যবসা ও পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে স্থলবন্দরটি। এ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই পাথর। গত নভেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধের পর ভুটান থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ ট্রাকে পাথর আমদানি হয়েছে। ভারতের ফুলবাড়িতে নতুন করে সুবিধা পোর্টাল চালুর দাবির কারণে ভুটান গত তিনদিন ধরে বাংলাদেশে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে।
গত ডিসেম্বরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছিল ৫৮০২টি ট্রাক। যার মালের ওজন ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ টন। এর মধ্যে ভারত থেকে ২৪টি ট্রাক, ভুটান থেকে ৫৬৭৯টি ও নেপাল থেকে ৯৯টি। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ২২৮ ও নেপালে ২২৬টি ট্রাকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার ওজন ছিল ৮৩৭৪ টন। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে ভারত ও নেপালে বাংলাদেশ থেকে কটন র্যাগস, র-জুট, প্লাস্টিক, ব্যাটারি, জুট ইয়ার্ন ও পলেস্টার পেট গ্রানুলসসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
এদিকে কাস্টম সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রাজু বলেন, পাথর আসা বন্ধ হওয়ায় ট্রাক আসছে না। তাই একটু ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। একই কথা বলেন ভাতের হোটেলের মালিক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্দরটি পাথর নির্ভর। পাথর এলে লোকজনের সমাগম বেড়ে যায়। আমাদের ব্যবসা হয়। এখন লোকজন কম, তাই ব্যবসা তেমন হচ্ছে না।
বাংলাবান্ধায় লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আক্তারুল হক বলেন, আমাদের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি পাথরের ওপর নির্ভরশীল। এ বন্দরে অন্য সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির তুলনায় পাথর আমদানিই হয় বেশি। গত নভেম্বর থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এখন তবে ভুটানের পাথর আমদানি বন্ধ হওয়ায় বন্দরটি পাথর নির্ভর হওয়ায় পাথর না আসায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফুলবাড়িতে স্লট বুকিং বা অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রাখায় কয়েক দিন ধরে পাথর আসছে না। গত নভেম্বর থেকে ভারতের পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ভুটান সুবিধা পোর্টালের আওতায় আসলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, আমাদেরকে বেশি মূল্যে পাথর আমদানি করতে হবে। এ কারণে ভুটান পাথর রপ্তানি আপাদত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তারা। স্থলবন্দরে পাথর না আসার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের শ্রমিকরাও। আশা করছি সমস্যা সমাধান হবে শীঘ্রই। এ নিয়ে বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ গত শনিবার মিটিংও করেছেন।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহিন বলেন, ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক অনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুটানের গাড়ি সুবিধা পোর্টালের আওতায় আনার কারণে ভুটান এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মাল লোডিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে আমরা গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) স্থলবন্দরের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা ডেকে ছিলাম। সভায় ভ্যাট ও এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখব।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফুলবাড়িতে স্লট বুকিং বা অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বন্দরটি পাথর আমদানি নির্ভর হওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে বন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।