ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে ৭৭১ নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে অবশেষে ধরা আনোয়ার

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম:

নাম তার আনোয়ার হোসেন (৩০)। পেশায় তিনি একজন ‘ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তবে স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘ফেসবুক মাস্টার’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনের বিভিন্ন আইডির সমস্যা সমাধান করে ‘মাস্টার’ উপাধি পেয়েছেন প্রতারক আনোয়ার। আর এ যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে অভিনব প্রতারণা শুরু করে এই যুবক। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে শতশত নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের নামে ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ খুলেন আনোয়ার। আর এর মাধ্যমে ৭৭১ নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। সবশেষ আপত্তিকর ছবি আদান-প্রদানের ঘটনায় ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নারী থানায় এসে হাজির হন। এতে ওসি মহসীন নিজেই বিব্রতকর পরিস্থির মধ্যে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ওসি নিজেই বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। তদন্তে নেমে গত শুক্রবার গাইবান্ধার স্টেশন রোডের দাশ বেকারি মোড়ের ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারক আনোয়ারকে অবশেষে ধরা পড়তে হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা।
তিনি বলেন, আনোয়ার মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও ইন্টারনেট ঘেঁটে ফেসবুকসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তি, মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে তাদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলত। এরপর বিভিন্ন নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আপত্তিকর ছবিসহ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিত।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, আনোয়ারকে গ্রেফতারের পর তার কম্পিউটার ও মোবাইলে রাষ্ট্রপতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, চিত্রনায়ক শান্ত খান, অভিনেতা ও মডেল আব্দুন নুর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ফেসবুক আইডি পাওয়া যায়। এরমধ্যে কয়েকটি আইডি ডিজেবল পেলেও বাকিগুলো সচল অবস্থায় ছিল।
এ বিষয়ে মামলার বাদী তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গ্রেফতার আনোয়ারের ডিভাইস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৭৭১ নারীর সঙ্গে ‘ওসি মহসীন’ সেজে তিনি চ্যাটিং করেছেন। এটি পুলিশের জন্য মানহানিকর, ব্যক্তি মহসীনের জন্যও মানহানিকর। তিনি বলেন, চ্যাটিংয়ে বিভিন্ন নারী ওসি মহসীন ভেবে সহযোগিতার জন্য নক করেছিলেন। আর আনোয়ার তাদের সঙ্গে প্রথমে ভালোভাবে কথা বলেন। এরপর ধীরে ধীরে অশ্লীলভাবে চ্যাটিং করেন। অনেক নারী সন্দেহ করে লিখেছেন, ‘আপনি ওসি মহসীন তো’। অনেকেই আনোয়ারের কথার প্রতিবাদও করেছেন চ্যাটিংয়ে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বলেন, আনোয়ার কখনো ওসি, কখনো নায়ক, কখনো জনপ্রতিনিধি সেজে প্রতারণা করতেন। ভুয়া আইডি খুলে এ পর্যন্ত তিনি ৭০০ এর বেশি নারীর সঙ্গে কথা বলতেন। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন এ তালিকায়। ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার পর হোয়াটসঅ্যাপেও তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কথা বললেও কারো সঙ্গে ভিডিও কলে আসতেন না তিনি। আবার কেউ তাকে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বøক দেন আনোয়ার। তিনি মূলত মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। তাদের মধ্যে কারো কারো সঙ্গে ছবিও আদান-প্রদান করেন। আবার কারও কারও কাছে টাকাও দাবি করেন।