
সেলিনা আক্তার:
ভোগ্যপণ্যের ঘোষণা দিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের মাধ্যমে বিদেশী সিগারেট আমদানি করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে ৩ লাখ ৩০ হাজার শলাকা সিগারেট আমদানি করা হয়েছে। এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কাস্টমসের গুদাম থেকে অতিরিক্ত ১৬১ লিটার বিদেশি মদ ও ৭৯ কার্টন সিগারেট বিক্রিও করেছেন দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। ভেপের একটি চালান আটক নিয়েও চলছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হরহামেশা এ ধরনের অনিয়ম চলছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা নজরদারি এবং কাস্টম হাউসের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে অসাধু আমদানিকারকরা। এতে প্রতিনিয়ত সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গালফ এয়ারের ০৭২৭৩২৩৮৬৬৪ এয়ারওয়ে বিলের মাধ্যমে কনজ্যুমার গুডস ঘোষণায় কিছু পণ্য আসে। এয়ারওয়ে বিলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে পণ্য এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিগারেটের মূল্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ বাথ। বাংলাদেশি টাকা তা হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। ঢাকার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মাটি বিজ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আসে বিশাল পরিমাণের এই বিদেশি সিগারেট। শুধু অবৈধ সিগারেট নয়, আরও বেশ কিছু পণ্যের চালান একই আমদানিকারক নিয়ে এসেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, একটি এয়ারওয়ে বিলের মাধ্যমে অবৈধ সিগারেট আমদানি করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে চালানটি আটক করেছি। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই আমদানিকারকের ভেপের আরেকটি চালান আটক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু সিগারেট বা ভেপের অবৈধ চালান নয়, নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা কাস্টম হাউসে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাউসের দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তারা দুজনই গুদামের দায়িত্ব ছিলেন। এই কর্মকর্তারা ইনভয়েসের বাইরে কাস্টমসের সাধারণ গুদামে জব্দ করা মদ ও সিগারেট বিক্রি করেছেন। নির্ধারিত ইনভয়েসের তুলনায় ১৬১ লিটার বিদেশি মদ ও ৭৯ কার্টন সিগারেট অবৈধভাবে অপসারণ করেছেন। পর্যটন করপোরেশনের কাছে বিক্রি করা ইনভয়েসে মূলত ছিল ২২৯ লিটার মদ ও ৫৮৪ কার্টন সিগারেট। কিন্তু বাস্তবে তারা অপসারণ করেছেন ৩৯০ লিটার মদ ও ৬৬৩ কার্টন সিগারেট। এতে সরকারের প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। এই গরমিলের প্রমাণ পেয়েছে রাষ্ট্রের আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে দেশে আলোচিত ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনাও ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি সুরক্ষিত গোডাউন থেকে হয়েছিল, যা নিয়ে বিগত সরকারের নানা নাটকীয়তা ছিল। যার তদন্ত এখনো চলমান। ভয়াবহ এ ঘটনার পরও অনিয়মে জড়িয়েছেন দুই শুল্ক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।