ভ্যাট বেড়ে দ্বিগুণ, বাড়ছে টিস্যুর দামও

প্রকাশিত: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় আরও এক ধাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

ভ্যাট বাড়ার কারণে দাম বাড়তে পারে ইন্টারনেট, পোশাক, রেস্তোরাঁর খরচ, সব ধরনের টিস্যু, মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।

টিস্যুর দাম বাড়বে

ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, কিচেন টিস্যুসহ বিভিন্ন ধরনের টিস্যুর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে নতুন অধ্যাদেশে। আগে এই হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। ভ্যাট বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার ফলে টিস্যুর দাম বাড়তে পারে।

মুঠোফোনে কথা বলার খরচ বাড়ল

সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মুঠোফোনে কথা বলার খরচ আগের চেয়ে বাড়বে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। কারণ, মুঠোফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।

পোশাকের দাম বাড়বে

ব্র্যান্ডের দোকান বা বিপণিবিতান থেকে তৈরি পোশাক কিনতে গেলেও এখন আগের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হবে। পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে এক লাফে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে এ খাতে ভ্যাট হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে পোশাকের দাম বাড়বে বলে জানান পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি তারা ব্যবসা কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন। ব্র্যান্ডের পোশাক বা ব্র্যান্ড ব্যতীত পোশাকের দোকান—উভয় ক্ষেত্রেই নতুন ভ্যাট হার প্রযোজ্য হবে।

রেস্তোরাঁর খরচও বাড়বে

সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট এক লাফে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এত দিন এই হার ছিল ৫ শতাংশ। তাতে ১ হাজার টাকা খাবারের বিলে খরচ বাড়বে ১০০ টাকা।

সারা দেশে সোয়া পাঁচ লাখ রেস্তোরাঁ রয়েছে। শহর এলাকায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক এবং বৈচিত্র্যময় খাবারের দোকান আছে। শহুরে মানুষের মধ্যে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রচলন চালু রয়েছে। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি পরিবার-পরিজন নিয়ে রেস্তোরাঁর খেতে গেলে আগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ হবে।

এ ছাড়া মিষ্টির দোকানের ভ্যাটও সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে মিষ্টির দামও বেড়ে পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শিশুদের খাবারের দাম বাড়ছে

বিস্কুট, জুস, ড্রিংক, ফলের রস, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক, কেক (৩০০ টাকার বেশি দামের), আচার, টমেটো সস ও কেচাপ ইত্যাদি শিশুরা বেশি পছন্দ করে। এসব পণ্যভেদে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে।

এ ছাড়া এলপি গ্যাসের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ২ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

আরও যেসব পণের শুল্ক-কর বাড়ল

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তালিকায় থাকা অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আমদানি করা বাদাম, আম, কমলালেবু, আঙুর, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, রং, ডিটারজেন্ট।

এ ছাড়া স্থানীয় উৎস বা দেশের মধ্যে উৎপাদিত তামাকযুক্ত সিগারেট, রং, মদের বিল, পটেটো ফ্ল্যাকস, প্লাস্টিক ও মেটাল চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, সান গ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তাতে ব্যবহৃত তেল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সিআর কয়েল, জিআই তারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

সিগারেটের দাম বাড়বে

মূল্যস্তর পরিবর্তন ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। বিভিন্ন মূল্যস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।