ভয়ংকর মাদক ‘এলএসডি’র পর আরও ভয়ংকর মাদক ‘ডিএমটি’ ধরা পড়েছে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে মাদক ডিএমটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় চার যুবককে আটক করা হয়। তাদের দেহ তল্লাশি করে মাদক ও মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
রোববার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের বিশেষ আভিযানিক দল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার লাভরোড এলাকা থেকে সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদ শাদাব (২৯), আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের (২৫), স্বপ্নিল হোসেন (২২) ও সিমিয়ন খন্দকারকে (২৩) আটক করে। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে মাদক এলএসডির ৪০ ব্লট, নতুন মাদক ডিএমটি ৬০০ মিলিগ্রাম, আমেরিকান ক্যানাবিজ ৬২ গ্রাম এবং মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল অভিযানে অংশ নেয়।
অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম আরও বলেন, বিদেশ থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে এলএসডি বাংলাদেশে আনা হয়। এটি উচ্চমূল্যের হওয়ায় এর ব্যবহারকারী উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, ডিএমটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ডাইমেথাইল ট্রিপটামাইন। এটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। এটি এলএসডি সেবনের মতো ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সঙ্গে নেওয়া হয়। এটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর আসক্তি তৈরি করে।
গ্রেফতারদের তথ্য অনুযায়ী-এটি সেবনের পর ত্বরিত হ্যালুসিনেশন হয় এবং সেবককারী দ্রুত কল্পনার জগতে প্রবেশ করে। এটা থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে। এমনকি জীবন নাশও হতে পারে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে খন্দকার সাইফুল বলেন, তাদের মধ্যে একজন থাইল্যান্ডে এবং একজন লন্ডনে পড়াশোনা করেছে। বিদেশে অবস্থানকালে তারা ডিএমটি ও এলএসডি মাদক নিয়মিত গ্রহণ করত।
উত্তরার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও-লেভেল শেষ করার পর সৈয়দ শাদাব ভারতের দার্জিলিংয়ে এ-লেভেল (২০১৩ সাল) পড়াশোনা করেন। বিবিএ পড়ার জন্য ২০১৫ সালে তিনি থাইল্যান্ডে যান। সেখানে এক বছর বিবিএ পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে তিনি এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণে আসক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এসেও তিনি ওই মাদক গ্রহণ অব্যাহত রাখেন। বিদেশ থেকে বিভিন্ন পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকটি তিনি দেশে নিয়ে আসেন। দেশে এনে মাদকটি তিনি নিজে গ্রহণ এবং বিক্রি করেন।
অপর দিকে, রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও-লেভেল শেষ করে তাহের মালয়েশিয়া যান এবং পড়ালেখার জন্য ২০১৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি অবস্থান করেন। পরবর্তী সময় উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি লন্ডনে যান এবং সেখানে তিনি নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ করতেন। ২০২০ সালে এমবিএ শেষ করে সেখান থেকে তিনি দেশে ফেরেন এবং দেশে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ এবং বিক্রি করেন। এ ছাড়া স্বপ্নিল ও সিমিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শাদাব ও তাহেরের সঙ্গে এক হয়ে তারাও মাদক সেবন ও বিক্রিতে জড়িয়ে পড়েন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-২ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, এর আগে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডিএমটি জব্দ করেছে বলে আমরা কোনো তথ্য পাইনি। বিভিন্ন রাসায়নিক ও প্রকৌশল গবেষণাগারে এ মাদক তৈরি করা যেতে পারে। এলএসডি কি তাহলে বিস্তার লাভ করেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি কয়েকটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটি আরও সহজলভ্য হলে আমাদের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। যাতে এটি আমরা নির্মূল করতে পারি।
আমেরিকান ক্যানাবিজ নামের গাঁজা কিভাবে বাংলাদেশে এলো-এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার সাইফুল বলেন, তাদের একজন জানিয়েছে কানাডার ভ্যানকুভার এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এটি সংগ্রহ করত। অনেক সময় বন্ধুবান্ধব লাগেজে করে অল্প অল্প করে গাঁজা এনেছে বলে জানিয়েছে তারা। আবার বেশির ভাগ সময় তারা পোস্টাল ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে আসত।
তিনি বলেন, মাদকগুলো তারা ফ্যান্টাসি (অলিক কল্পনা) হিসাবে গ্রহণ করত। সমুদ্রতীরে, নির্জন রিসোর্টে বা পাহাড়ের উপরে বসে তারা এগুলো গ্রহণ করত। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের রিসোর্টে দুই-তিনজন মিলে এসব মাদক গ্রহণ করত। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ৬০০ গ্রাম ডিএমটি কিনতে তাদের খরচ পড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা। তবে এটি নিয়ে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এলএসডি ও ডিএমটির মূল হোতাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।