মরদেহকে মাটি বানিয়ে দিচ্ছে এই যন্ত্র, বাড়ি নিয়ে লাগানো হচ্ছে গাছ

প্রকাশিত: ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

লরা মাকেনহোপট, নিজের ২২ বছর বয়সী ছেলে মাইলের মরদেহ ট্রাকে করে নিয়ে আসেন। তবে এটি যে তার ছেলে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ তার মরদেহটি মাটি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের একটি প্রতিষ্ঠান তার ছেলের নিথর দেহকে প্রায় দেড়শ কেজি মাটিতে পরিণত করে দিয়েছে। আর এই মাটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। পরবর্তীতে সেগুলো বাড়ির আঙ্গিনায় রেখে সেখানে ফুলের গাছ লাগান তিনি।

‘আর্থ ফানারেল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করছে। এটির সিইও টম হ্যারিস বলেছেন, মৃতদেহ কবরস্থ করার পর যেভাবে ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত হয়। ঠিক সেভাবেই এটি হচ্ছে। তবে আমরা শুধু বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করছি। বিষয়টি জলবায়ু ও পৃথিবীর জন্য অনুকূল। কারণ মরদেহ দাহ করলে যে কার্বন নিঃসরণ হয়, এটি করলে তার তুলনায় কম হয়। অপরদিকে কবরস্থ করার জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে সেটি করতে হচ্ছে না।

মাইলের মরদেহ থেকে তৈরি করা মাটি রাখা হয়েছে তার বাড়ির বাগানে। সেই মাটিতে লাগানো হয়েছে একটি গোলাপ গাছ। আর বেশিরভাগ মাটি রাখা হয়েছে মাইলের প্রিয় চেয়ারটির পাশে।

তার মা মাকেনহোপট বলেন, “যতবারই গোলাপ ফুলটির কুঁড়ি বের হয়। তখনই আমি এটি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখি। এটি একটি উপহার। মনে হয় মাইল যেন অল্প সময়ের জন্য এসেছে। বিষয়টি অসাধারণ।”“মরদেহ দাহ বা কবরস্থ করার চেয়ে এ বিষয়টি ভিন্ন। ওইগুলোর ক্ষেত্রে আপনি শেষকৃত্যের আয়োজন করেন। এরপর সব শেষ। আর মরদেহ মাটিতে পরিণত করার মাধ্যমে নতুন গল্পের শুরু হয়।”— যোগ করেন মাকেনহোপট।

মরদেহ কীভাবে মাটিতে পরিণত করা হয়

‘আর্থ ফানারেল’-এর সিইও টম হ্যারিস অন্তোষ্টিক্রিয়া প্রতিষ্ঠানে বহু বছর কাজ করেছেন। তবে নিজের মৃত্যুর চিন্তা থেকে তিনি মরদেহকে মাটিতে পরিণত করার বিষয়টি উদ্ভাবন করেন। কারণ তিনি চান না তার মৃত্যুর পর তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা বা কবরস্থ করা হোক।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পন্থা হলো মরদেহ দাহ করা (প্রায় ৬০ শতাংশ)। কারণ কবরস্থ করার চেয়ে এটি বেশি সাশ্রয়ী।

কিন্তু মরদেহ দাহ করলে এটি পরিবেশের ক্ষতি করে। অপরদিকে কবরস্থ করলে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এটিও পরিবেশের জন্য ক্ষতি।

কীভাবে মরদেহটি মাটিতে পরিণত করা হয় সেটি জানান টম হ্যারিস। তিনি বলেন, এটি খুবই কম সময় নেয়। মরদেহটিকে জীবাণুবিয়োজ্য কাফনে মোড়ানো হয়। এবং এটিকে লম্বা লোহার ক্যাপসুলে রাখা হয়। মরদেহটির সঙ্গে দেওয়া হয় কাঠের খণ্ড, গাছের শিকরের পাশে থাকা ভেজা খড় ও পাতা এবং বনফুল। যখন মরদেহটি মাটিতে পরিণত হওয়া শুরু করে তখন এটি নাইট্রোজেন নিঃসরণ করে। অপরদিকে কাঠ, গাছের শিকর এগুলো থেকে বের হয় কার্বন। যেহেতু ক্যাপসুলটি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়, এতে মরদেহটি মাটিতে পরিণত হয়। যা সম্পন্ন হতে লাগে ৪৫ দিন। এরপর প্রায় দেড়শ কেজি মাটিতে পরিণত হয়। হ্যারিস জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা যতটুকু খুশি ততটুক মাটি নিতে পারেন। আর বাকিটা ওয়াশিংটন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ স্থলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে বেড়ে ওঠে গাছপালা।