আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলার গ্রামগুলোতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন অন্তত ২ হাজার ৮৫১ জন কৃষক। ২০২২ সালের চেয়ে কম হলেও ২০২১ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি।
সর্বোচ্চ কৃষক আত্মাহুতির ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের বিদর্ভ জেলায় (১ হাজার ৪৩৯ জন), দ্বিতীয় স্থনে রয়েছে মারাঠাওয়াড়া জেলা (১ হাজার ৮৮ জন)।
এছাড়া তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে অমরাবতী জেলা (৩১৮ জন), যাবৎমল (৩০২ জন), বুলধানা (২৯২ জন), বিড় (২৬৯ জন), ছত্রপতি শম্ভুজিনগর (১৮২ জন) এবং জলগাঁও (১৫১ জন)।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের হাইকোর্ট (আওরঙ্গাবাদ হাইকোর্ট) সম্প্রতি রাজ্যের কৃষকদের পরিস্থিতি জানতে চেয়ে প্রতিবেদন তলব করেছিল। আদেশ মেনে সম্প্রতি তা জমা দিয়েছে হারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তা আরও বেশিও হতে পারে।
আত্মহত্যাকারীদের ৯৬ শতাংশই আর্থিক অনটন ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে নিজেকে শেষ করার পথ বেছে নিয়েছেন। বাকি ৪ শতাংশ আত্মঘাতী হয়েছেন ব্যক্তিগত ও অন্যান্য কারণে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর হাজারো কৃষকের আত্মহত্যা প্রায় নিয়মিত ঘটনা মহারাষ্ট্রে। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের গোটা বছরে মহারাষ্ট্রে আত্মহত্যা করেছিলেন ২ হাজার ৯৪২ জন কৃষক। তার আগের বছর ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ২ হাজার ৭৪৩ জন।
মহারাষ্ট্রকে বলা হয় ভারতের পেঁয়াজের রাজধানী। প্রতি বছর দেশটিতে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, তার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আসে রাজ্যটির বিভিন্ন গ্রাম থেকে। পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য ফসলও উৎপাদন করে মহারাষ্ট্র।
কিন্তু রাজ্যের কৃষকদের বড় অংশই দরিদ্র এবং কৃষকদের আত্মহত্যা করার প্রবণতাও এই রাজ্যে বেশি। রাজ্যের কৃষক নেতা কিশোর তিওয়ারি এজন্য রাজ্য সরকারকে সরাসরি দায়ী করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে কিশোর বলেন, ‘খরা, ঝড়-বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়া মহারাষ্ট্রে প্রায় নিয়মিত ঘটনা; কিন্তু ফসল নষ্ট হলেও ঋণের কিস্তি জমা দেওয়ার চাপ থাকে। অনেক সময় সর্বস্ব বিক্রি করেও সেই কিস্তি জমা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কৃষকের সামনে উপায় থাকে না।
মহারাষ্ট্রের কোনো রাজ্য সরকার আজ পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে কৃষকদের কল্যাণে কোনো পরিকল্পনা নেয়নি, বা নিলেও খুবই অদক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। ২ বছর আগে কৃষকদের ওপর ঋণের বোঝা কমাতে বিশেষ অর্থনৈতিক কর্মসূচি লোন ওয়েইভার স্কিম নিয়েছিল সরকার; কিন্তু সেই প্রকল্পে অনেক কৃষকের নাম নথিভুক্ত করা হয়নি। ফলে রাজ্যের বহু কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না।’