মাইক্রোসফটের সব কর্মীর হাতে রক্ত লেগে আছে: গাজা ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানটির দুইকর্মী

ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রযুক্তি কম্পানি মাইক্রোসফটের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এআই (কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা) সিইও মুস্তাফা সুলেমান ফিলিস্তিনিপন্থী তাদেরই দুইকর্মীর প্রতিবাদের মুখে পড়েন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং সাবেক সিইও স্টিভ বলমারও উপস্থিত ছিলেন।
মাইক্রোসফটের এআই সিইও মুস্তাফা সুলেমান পণ্যের আপডেট এবং কম্পানির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহকারী পণ্য সম্পর্কে কথা বলছিলেন। এ সময় ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে ওই অনুষ্ঠানে মুস্তাফা সুলেমানের বক্তব্যে বাধা দিয়ে মাইক্রোসফটের কর্মচারী ইবতিহাল আবুসাদ বলেন, ‘আপনি যুদ্ধের মুনাফাখোর। গণহত্যার জন্য এআই ব্যবহার বন্ধ করুন।’
এআই (কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা) সিইও মুস্তাফা সুলেমান মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় মাইক্রোসফটের কর্মী ইবতিহাল আবৌসাদ চিৎকার করে বলেন, ‘মুস্তফা, তোমার লজ্জা হোক। তুমি দাবি করো যে, তুমি ভালোর জন্য এআই ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু মাইক্রোসফট ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে এআই অস্ত্র বিক্রি করে। সেখানে পঞ্চাশ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং মাইক্রোসফট আমাদের অঞ্চলে এই গণহত্যার ক্ষমতা দিয়েছে।
ওই সময় মাইক্রোসফটের এআই সিইও মুস্তাফা সুলেমান বক্তৃতা থামিয়ে জবাবে বলেন, ‘আমি আপনার প্রতিবাদ শুনছি, ধন্যবাদ।’ তবুও আবৌসসাদ চিৎকার করে বলতে থাকেন, তার এবং সকল মাইক্রোসফটের সদস্যদের হাতে রক্ত লেগে আছে। এরপর তিনি মঞ্চে একটি কেফিয়া স্কার্ফ ছুঁড়ে মারেন, যা ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার পর আবৌসসাদকে অনুষ্ঠার থেকে বের করে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে একজন প্রতিবাদকারী এবং মাইক্রোসফটের কর্মী ভানিয়া আগরওয়াল অনুষ্ঠানের আরেকটি অংশে প্রতিবাদ জানান। যেখানে বিল গেটস, বলমার এবং বর্তমান সিইও সত্য নাদেলা মঞ্চে ছিলেন।
এর আগে এই বছরের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি তদন্তে প্রকাশিত হয়েছিল যে, ইসরায়েলি সামরিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাদের মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআইয়ের এআই মডেলগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা এবং লেবাননে সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করেছে। ওই তদন্তে ২০২৩ সালে একটি ভুল ইসরায়েলি বিমান হামলার বিবরণও ছিল। যে হামলায় লেবানিজ পরিবারের সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে আঘাত করা হয়েছিল। ওই হামলায় তিন তরুণী এবং তাদের দাদী নিহত হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতেও চুক্তির প্রতিবাদ করার জন্য সিইও সত্য নাদেলার সঙ্গে এক বৈঠক থেকে পাঁচজন মাইক্রোসফট কর্মীকে বের করে দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানটি একটি অভ্যন্তরীণ সভা হলেও, গতকাল শুক্রবারের অনুষ্ঠানটি জনসমক্ষে হয়েছিল।
মাইক্রোসফট বলেছে, তারা সকলের অভিযোগ শোনার জন্য অনেক পন্থার কথা জানিয়েছে, যাতে ব্যবসায়িক ব্যাঘাত না ঘটে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা অনুরোধ করছি- এমন কর্মকাণ্ড না ঘটানোর জন্য, যাতে ব্যবসায়িক ব্যাঘাত ঘটে। যদি তা ঘটে, তাহলে আমরা তাদের (প্রতিবাদকারী) অন্য জায়গায় সরে যেতে বলি। আমাদের ব্যবসায়িক অনুশীলনগুলো সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মাইক্রোসফ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আরও কোনো পদক্ষেপ নিবে কি না, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মাইক্রোসফট। তবে এপি আবৌসাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, প্রতিবাদের পর তিনি এবং অন্য একজন প্রতিবাদী কর্মী তাদের কর্মক্ষেত্রের অ্যাকাউন্টে প্রবেশের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।