মাগুরায় সরকারি নলকূপ স্থাপনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মাগুরা প্রতিনিধি:
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় সরকারি নলকূপ স্থাপনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা অনিয়মের ও অভিযোগের জন্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমিকে দায়ী করছেন।
তাদের দাবি, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমির যোগসাজসে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক রাজু আহমেদ প্রতিটা নলকূপের গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫শ টাকা থেকে ২ হাজার পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভুক্তভোগীরা ইতিমধ্যে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিগত অর্থবছরগুলোতে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের করা তালিকা অনুযায়ী গভীর ও অগভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের গভীর নলকূপে সরকারিভাবে দশ হাজার টাকা ও অগভীর নলকূপের জন্য সাত হাজার টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ অমির যোগসাজসে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক রাজু আহমেদ প্রতিটি নলকূপের গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়ে থাকেন।এছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলে নিজেদের আত্মীয়দের ৪-৫টি করে নলকূপ দেওয়া এবং বরাদ্দ প্রতি অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলতে থাকলে উপজেলার সাধারণ মানুষ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সেবার প্রতি আস্থা হারাবেন বলে মনে করছে স্থানীয়রা।অভিযোগের বিষয়ে রাজু আহমেদ বলেন, গ্রাহকদের বলেছি নলকূপ বাবাদ নগদ টাকা কারো হাতে দেবেন না এবং ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দেবেন। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।
শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৩-২৪ অর্থবছরে জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় উপজেলাতে গভীর নলকূপে সরকারি বরাদ্দ ছিল ৬৬টি।
গভীর নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া উপজেলার আমলশার গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের শাওন বলেন, অফিসে আমি দশ হাজার ৫শ টাকা জমা দিয়েছি। এরপর যারা নলকূপ বসাতে এসেছিল তাদের কয়েকদিনের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় বকশিস দিতে হয়েছে। যাতে করে আমার প্রায় আরও দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত টাকা খরচ করলেও কাজের মান খুবই খারাপ হয়েছে। পানি দিয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে দুই মাস পরও খাবারের উপযোগী পানি পাচ্ছি না।
উপজেলার আড়ুয়াডাঙ্গী গ্রামের গভীর নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া আফজাল শেখ বলেন, নলকূপ বরাদ্দ পাওয়ার পর সাড়ে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। এরপর শ্রমিকদের খাওয়া বকশিস দিতে গিয়ে আরও প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে যারা কাজ করেছে তারা খুবই নিম্নমানের কাজ করেছে।
এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরান মাহমুদ আমি বলেন, অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার বিষয়ে সাবধান করে আমি আমার স্টাফদেরকে বলে রেখেছি এবং আমাদের অফিসের সামনে লিখে রেখেছি। এখানে ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নিম্নমানের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম দিকে ঠিকাদার আমাদেরকে না জানিয়ে কিছু নিম্নমানের কাজ করেছিল যেগুলো খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। অচিরেই লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হয়েছে আমাদের অফিসের স্টাফ ব্যতীত আপনারা কোনো কাজ করবেন না। আমরা ইতিমধ্যে নিম্নমানের কাজ বন্ধ রেখেছি। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এবিষয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।