কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গভীরতম সমুদ্রবন্দর। এই বন্দর ঘিরেই চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। আগামী তিন বছর পর এই বন্দর চালু হলে একসঙ্গে কনটেইনার ও পণ্যবাহী বড় জাহাজ ভিড়বে। চট্টগ্রাম বন্দরের তিন গুণ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
প্রতিটি কনটেইনারে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমবে ৩০ শতাংশ। ১৬ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়া করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির চিত্র বদলে যাবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কক্সবাজারে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেলের উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে দিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম গতিশীল হবে।
গত বৃহস্পতিবার মাতারবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রবন্দরসংশ্লিষ্ট কোনো স্থাপনা এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু সেখানে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী খালাসের জন্য মাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি অস্থায়ী জেটি।
গত ৯ মাসে এসব জেটিতে বিশাল আকৃতির ১০টি জাহাজ ভিড়েছে। এসব জাহাজে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা হয়েছে প্রায় আট লাখ টন কয়লা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দিন দেশে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর ছিল না। তাই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে খরচ যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনি সময়ও বেশি লাগছে। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি সহজ হবে।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কলম্বোর মতো বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির দরকার হবে না।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪০ ফুটের প্রতিটি কনটেইনারে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে খরচ হয় দুই হাজার ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে আড়াই হাজার ডলার এবং চীনে এক হাজার ২০০ ডলার খরচ পড়ছে। এ ছাড়া চীন থেকে ২০ ফুটের কনটেইনার আনতে খরচ পড়ছে ৮০০ ডলার। অথচ মাতারবাড়ী বন্দর বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রপথে প্রতি ২০ ফুটের কনটেইনারে ১৩১ ডলার এবং ৪০ ফুটের কনটেইনারে ১৯৭ ডলার খরচ বাঁচবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে বন্দর করতে যে বিনিয়োগ করা হবে তা সাত-আট বছরের মধ্যে ফেরত আসবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা নিট লাভ করে। মাতারবাড়ী বন্দর অবকাঠামো নির্মাণে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। সেটা সাত-আট বছরের মধ্যে উঠে আসবে।
প্রতিবছর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের সিতুই, কলকাতার হলদিয়া, ভাইজাক, আন্দামানসহ বঙ্গোপসাগরের এই বেল্টে কোনো বন্দরে ১৬ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। এখানে যদি এই বন্দর হয়, এটি এখানকার আঞ্চলিক কেন্দ্র হবে।’