মাত্র চার বছর বয়সে কীসের পুরস্কার পেয়েছিলেন অঞ্জনা

প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫

বিনোদন ডেস্ক:

শিশুকাল থেকেই নৃত্যের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। বাবা-মার ইচ্ছায় সে হিসেবেই গড়ে উঠছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাত্র চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অঞ্জনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর আর থেকে থাকেননি। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন।

একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের একটি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন গভর্নর খুশি হয়ে তাকে ২০০ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন। সেই ছোট্ট শিশুটি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন নায়িকা অঞ্জনা হিসেবে। সিনেমায় আসার আগেই অবশ্য নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান অঞ্জনা

ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে অঞ্জনার জন্ম। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি তার আগ্রহের কারণে বাবা-মা তাকে নাচ শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের কাছে নাচের তালিম নেন, শেখেন কত্থক।

সাদাকালো থেকে রঙ্গিন বাংলা চলচ্চিত্রের সাক্ষী গুণী এই অভিনেত্রী। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন একজন অঞ্জনা। ৬০ বছর বয়সে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, তার জীবন শুরুই হয়েছে নৃত্যশিল্পী হিসেবে। এরপর অল্প বয়সেই সিনেমা সিনেমায় নাম লেখান তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়।

 

গেল বছর চার বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পুরস্কার গ্রহণের পেপারকাটিং প্রকাশ করে অঞ্জনা লেখেন, ‘আমার ৪ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্র ইউনিয়নের অভিষেক অনুষ্ঠান। আমার নৃত্য মুগ্ধ হয়ে গভর্নর সাহেব আমাকে তৎকালীন সময়ে ২০০ টাকা দিয়ে পুরস্কার দিয়ে আশীর্বাদ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ ও আমার বাবা উপস্থিত ছিলেন।’

অঞ্জনার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি।

১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেন ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ,‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরীণিতা’ ইত্যাদি বাণিজ্যিক সফল সিনেমায়।

অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার।

নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি।‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।