শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের শেখ ফজিলাতুন্নেছা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ৮টি ল্যাপটপ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারীর বিরুদ্ধে।
তবে এমন ঘটনা নতুন না, এর আগেও তিনি নতুন বই চুরির ঘটনায় ৬ মাসের জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠায় অপসারণের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
মাদরাসার শিক্ষার্থী, উপজেলার শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে গোসাইরহাট উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭টি ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি ল্যাবে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পায় সেখানে ৯টি ল্যাপটপ রয়েছে। বিষয়টি উপজেলার শিক্ষা ও আইসিটি কর্মকর্তার কাছে জানানো হলে মাদরাসার ল্যাপটপ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেন উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনকালে ৮টি ল্যাপটপ না থাকার বিষয়টির সত্যতা মেলে। পরে মাদরাসার সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারীকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাকি ল্যাপটপগুলো সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ল্যাপটপ সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ঘুস নেওয়া, ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ এবং পাঠাগারের জন্য বরাদ্দকৃত তিন লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ২০১৬ সালে মাদরাসার নতুন বই চুরির ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়ে ৬ মাসের জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা মাদরাসা সুপারের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এবং তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
মাদরাসার এক শিক্ষার্থী বলেন, সুপার স্যার মাদরাসার জন্য বরাদ্দকৃত টাকাপয়সা ও ল্যাপটপ আত্মসাৎ করে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আসা সরকারি বরাদ্দের ৭০ হাজার টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বড় ভাইদের জানালে তারা পরবর্তীতে সুপারকে বললে সুপার কয়েকজনের টাকা ফেরত দেন। এখনো অনেক সহপাঠী সেই টাকা পায়নি।
এ ব্যাপারে মাদরাসার সহকারী সুপার ফজলুর রহিম বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর আইসিটি অফিসার ল্যাব খুলে ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ৯টি পান আর ৮টি ল্যাপটপ না পেয়ে তাকে জানান। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সুপার মাদরাসায় আসছেন না।
সহকারী সুপার বলেন, আমি জানি না কে বা কিভাবে ল্যাপটপগুলো নিয়ে গেছে। তবে সুপার স্যারের অনুপস্থিতির পর থেকেই এ বিষয়টি সামনে আসে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদরাসার সুপার ফখরুল ইসলাম আনসারী। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছু দুষ্কৃতকারী তাকে হুমকি দিয়ে মাদরাসায় যেতে বাধা দিচ্ছে এবং পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করছে। আমি মাদরাসা থেকে যাওয়ার আগে ১৭টি ল্যাপটপ ল্যাবে রেখে গেছি। কোনো ল্যাপটপ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে মাদরাসা পরিদর্শনকালে ৮টি ল্যাপটপ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। মাদরাসার সুপারকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাকি ল্যাপটপগুলো সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তবে অসুস্থতার কারণে তদন্ত শেষ করতে পারিনি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে যদি সুপার দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।