মাদারীপুরে মোটরসাইকেল চালক হত্যায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২৩

মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরে মোটরসাইকেল চালক শাহাদাত ঘরামীকে (১৮) হত্যার দশ বছর পর ৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে আসামিরা সবাই পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামনগর এলাকার সুলতান শরিফের ছেলে সেন্টু শরীফ (৩৫), কমলাপুর এলাকার মান্নান ফকিরের ছেলে মিরাজ ফকির (৩০) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরের মৃত জিন্নাত শেখের ছেলে ফজেল শেখ (৫০)।
আদালত, মামলার বিবরণ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বড় দুলালী এলাকার মোকসেদ ঘরামীর ছেলে শাহাদাত ঘরামী ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী মিরাজ ও সেন্টু সন্ধ্যা ৬টার দিকে বরিশালে বার্থী যাওয়ার কথা বলে শাহাদাত ঘরামীকে ভাড়ায় নেন। তারা মোটরসাইকেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটি নেওয়ার জন্য শাহাদাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তাদের আত্মীয় ফজেল শেখের মাধ্যমে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি-নওহাটা এলাকার একটি জমিতে মরদেহ ফেলে তারা চলে যান। এ ঘটনার দুদিন পর নিহতের বাবা মোকসেদ ঘরামী বাদী হয়ে মিরাজ ফকির ও সেন্টু শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই সময়ের মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শ্যামলেন্দু ঘোষ তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। দশ বছর যুক্তিতর্ক শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় কেউ উপস্থিত ছিলেন না।


আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, একটি গরিব পরিবারের সন্তানের ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় আসামিরা। এদের মধ্য থেকে আসামি মিরাজকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিন নেওয়ার পর থেকে পলাতক আছেন। দীর্ঘ দশ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এই মামলার ৩ জন অভিযুক্তকে ফাঁসির আদেশ দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।
মামলার বাদী মোকসেদ ঘরামী বলেন, আমার ছেলে একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন আড়াইশো টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিল। সেন্টু, মিরাজ আর ফজেল মোটরসাইকেল নেওয়ার জন্য আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। শুধুমাত্র একটি মোটরসাইকেলের জন্য আমার ছেলেকে এভাবে মেরে ফেললো, তা খুবই কষ্টকর। আজ আদালত ওদের ফাঁসির রায় দিয়েছেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। তবে একটাই দাবি, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। যাতে করে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পায়।