মানবতাবিরোধী অপরাধ: ময়মনসিংহের ২ আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গ্রেফতারি পরোয়ানার পরও পলাতক থাকা ময়মনসিংহের দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছেন আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আর্জি) দেখিয়ে কারাগারে পঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আসামিরা হলেন- অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতার আসামি হাসেম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও ময়মনসিংহ মহানগরীর তিনকোনা পুকুরপার মাহাবুল আলম মণ্ডল (৭০)। গতকাল বুধবার (৫ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার পর আদেশ দেওয়া হবে বলে নিউজ পোস্ট বিডিকে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।

গত ২৫ জুন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও ফুলপুরে পৃথক অভিযান চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে (যুদ্ধাপরাধ) অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতা এলাকা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হাসেম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও ময়মনসিংহ মহানগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকা থেকে মাহাবুল আলম মণ্ডলকে (৭০) গ্রেফতার করা হয়। বিকেলে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।

এসপি জানান, দীর্ঘদিন বিভিন্ন স্থানে অজ্ঞাত পরিচয়ে তারা পলাতক ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, ১৯৭১ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহম্মদের (বর্তমানে মৃত) নির্দেশে আল বদর মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমসহ ১৫-১৬ জন রাজাকার ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং উপজেলার গরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সোহাগী মাদরাসার হিসাবরক্ষক মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওইদিন দুপুরে অভিযুক্ত রাজাকাররা সোহাগী বাজার হতে আওয়ামী লীগ সমর্থক নিরীহ হিন্দু ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র করকে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে আটক রেখে পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় নির্যাতন করে। পরে তাকে হত্যার পর মরদেহ গুম করে।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে তারা মিয়াকে অপহরণ করে ময়মনসিংহ শহরের বড় মসজিদ রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করে এবং তাকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তার মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

এদিকে, মাহাবুব আলম মণ্ডল ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পলাতক ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে ফুলপুরে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী পরিমল চন্দ্র দাসের পিতা যোগেশ চন্দ্র দাসসহ তার ৯ জন আত্মীয়কে টেনেহিঁচড়ে কংস নদীর পাড়ে নিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।