মানবেতর জীবন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর, আবেদন করেও পাননি উপহারের ঘর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী
শীতে জবুথবু হয়ে জরাজীর্ণ ঘরের এক কোনায় বসে আছেন পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৭৮)। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বীর নিবাসের জন্য আবেদন করলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ঘর। রেজিয়া বেগমের আক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর কত অসহায় মানুষকে দেওয়া হলো অথচ তার ভাগ্যে একটি ঘর জুটলো না।
জানা গেছে, নোয়াখালীর সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামের জয়নাল পুলিশের বাড়িতে দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন রেজিয়া বেগম। তার স্বামী জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন রেজিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের জয়নাল পুলিশের বাড়িতে একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেগম ও তার দুই ছেলে। টিন দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন। বৃষ্টি হলে টিনের চালার ছিদ্র দিয়ে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘরের কাঁচা মেঝে। বৃষ্টির মধ্যেই তাদের সারারাত জেগেই কাটাতে হয়। রোদ এলে আবার রোদে শুকাতে হয়। জরাজীর্ণ ঘরে প্রবেশ করছে কুয়াশা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী পুলিশে চাকরি করতেন। কাউকে না বলে ১৯৭১ সালে দুই সন্তান রেখে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। অনেকে বলেছেন উনি যুদ্ধে মারা গেছেন, আমি যেন নাকফুল খুলে ফেলি। আমি খুলি নাই। যুদ্ধ শেষ হওয়ার ২২ দিন পর আমার স্বামী বাড়িতে আসেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেছেন। তখন কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি। বর্তমানে পুলিশের ভাতা আর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাই। একটা ঘর নাই তাই কষ্টে আছি। উপজেলায় গেছি, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গেছি। কোথায় গিয়ে কোনো কাজ হয়নি।
রেজিয়া বেগম আরও বলেন, ভাতা যা পাই তা দিয়ে কোনো রকম চলি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলে অসুস্থ তারা কাজ কর্ম করতে পারে না। এক দিন করলে তিন দিন বসে থাকে। সবাইকে নিয়ে এই ঘরে খুব কষ্টে আছি। বৃষ্টিতে ভিজি আর রোদে শুকাই। একটা ঘর হলে ভালো হয়। আমি সব সময় হাসিনাকে ভোট দেই। কারো থেকে টাকা নিয়ে দেই না, নিজের মন থেকে দেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের ছোট মেয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা ডিসি অফিসে গেছি, ইউএনও অফিসে গেছি কোথায় সাড়া পাইনি। আমার মা ঝড়ে বৃষ্টিতে ভাই ও তাদের ছেলেদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন। ঘর নাই বলে কষ্টের শেষ নাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে আবদুল জলিল বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। টাকার জন্য ঘর করতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।
কাদির হানিফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, ঘরের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো ঘর পাননি। বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানেরা জরাজীর্ণ ঘরে খুব কষ্টে আছেন। এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।
নোয়াখালীর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা বলেন, আপনার মাধ্যমে আবেদনের কাগজপত্রগুলো পেয়েছি। আমি দেখবো আবেদনের কোথাও ত্রুটি আছে কিনা। তবে আমরা আবেদনগুলো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। তারাই যাচাই-বাছাই করে ঘর বরাদ্দ দেন। আমি চাই দ্রুত তারা যেন ঘর পান। সে বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।