মামলা করার কথা বলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে হত্যা

প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর কামরাঙ্গীররের কুড়ারঘাট এলাকায় ভাড়া থাকতো মারিয়া নামের এক কিশোরী। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয় সে। সেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েই শিকার হয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের। এরপর পুলিশের কাছে মামলা করার কথা বলায় তাকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করতো মারিয়া। তাদের সঙ্গে নির্জন জায়গায় আড্ডাও দিতে যায় সে। তখন শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বন্ধুরা তাকে চাপ দিতে থাকে। শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় আসামি শাওন প্রথমে মারিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও ৫ জন তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে আসামিরা তাকে ছেড়ে দেয়। তখন ধর্ষণের শিকার কিশোরী জানায়, আসামিদের কাউকে সে ছাড়বে না। পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের নামে মামলা করবে। তখন আসামিরা ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মারিয়াকে ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে।
২০২২ সালের ১১ জুন ঢাকার কেরানীগঞ্জের আটিবাজার এলাকায় টহলরত পুলিশ ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পশ্চিম বামনশুর জামে মসজিদের সামনে পুকুর ভেসে থাকা অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। পুকুরে ভেসে থাকা নারীর হত্যার রহস্য উদঘাটন করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলক কুমার দে পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- মো. সজিব, মো. আলী আকবর, মো. রাকিব, মো. রিয়াজ ও শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় আসামি রাজিব, সুমন ও পারভেজকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক অলক কুমার দে বলেন, ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার আসামিরা এর আগে তাকে হত্যার পর আরেকজনকে হত্যা করেন। হত্যা মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে তারা স্বীকার করেন এর আগেও তারা এক নারীকে হত্যা করেছেন।


তিনি আরও বলেন, মারিয়া হত্যা মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় ও হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রথমে ঢাকা জেলার পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এক বছর তদন্তের পরও মামলার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর আমরা তদন্তে গিয়ে মরিয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করি। এটা জেলা পুলিশের এক অনন্য অর্জন।
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম বলেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় মারিয়া নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ । মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩২ জনকে।

মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি সজিব, আলী, রাকিব, রিয়াজ ও শাওন পেশাদার অপরাধী। তারা মাদক ব্যবসা ও খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। ২০২২ সালের ১০ জুন রাত ১১টার দিকে আসামিরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন খোলামোড়া এলাকার একটি নির্জন জায়গায় আড্ডা দিতে যায়। সেখানে আসামি রাকিব তার এক বান্ধবীকে নিয়ে আসে। সেই বান্ধবীই মারিয়াকে সেখানে নিয়ে আসে। একপর্যায়ে আসামি রাকিব ও আলী মারিয়ার বান্ধবীর সঙ্গে অন্য পাশে চলে যায়। তখন শাওন, রিয়াজ ও সজীব ভুক্তভোগী মারিয়ার সঙ্গে থেকে যায়। মারিয়াকে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য আসামি শাওন চাপ দেয়। কিন্তু সে তাতে আপত্তি জানায়। শাওনের সাথে থাকা অন্যরাও শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামি রাকিব ও আলী সেখান থেকে মারিয়ার বান্ধবীকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় আসামি শাওন প্রথমে মারিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য আসামিরাও তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে আসামিরা মারিয়াকে ছেড়ে দেয়। তখন মারিয়া বলে সে আসামিদের কাউকে ছাড়বে না। পুলিশের কাছে গিয়ে আসামিদের নামে মামলা করবে। এরপর আসামিরা মরিয়ার ওড়না টেনে জোরপূর্বক তাকে মাটিতে শুইয়ে দেয়। আসামি রাকিব মারিয়ার মুখ চেপে ধরে। আসামি আলী আকবর ও শাওন মারিয়ার ওড়না দিয়ে মারিয়ার দুই পা বেঁধে রাখে। আসামিরা ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত মারিয়ার গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। লাশ অটোতে নিয়ে বুড়িগঙ্গার দিকে রওয়ানা দেন। নাইটগার্ডের কথা মাথায় এলে লাশটি পুকুরে ফেলে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল লাশটি গুম করে ফেলা। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. খায়রুজ্জামান সিকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।