মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে আংশিক জেরা করা হয়েছে।

মামলার বিবাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন জানান, জেরা শেষে আদালত আগামী ১৯ মার্চ পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করেছেন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ দফায় ২৫ জনের পূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

মামুনুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে জেরা করেছি। আগামী তারিখে আবারও তাকে জেরা করা হবে। তিনি আমাদের জেরায় অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তাকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি কি বাদীনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তিনি বললেন জিজ্ঞাসাবাদ করিনি।

তিনি আরও বলেন, আলোচিত এ মামলায় বাদিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নাই তাহলে বুঝা যায় এটা একটা বানানো মামলা। বাদীনিকে কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেটাও তিনি জানেন না। বাদীনির ছেলে আব্দুর রহমান বলে গিয়েছিলেন ফাস্ট ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে আটক রেখেছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেছেন ফাস্ট ইন্টারন্যাশনাল হোটেল তিনি চিনেন না। এতে প্রমাণিত হয় এটা একটা ভুয়া মামলা মিথ্যা মামলা। তিনি কারও কাছ থেকে তদন্ত করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারে নাই। এটা একটা গোঁজামিলের তদন্ত।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করেছে আসামিপক্ষের আইনজীবী। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দুদিন জেরা করেছে। আরও একদিন জেরা করার জন্য সময় চেয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ইচ্ছা করেই সময়ক্ষেপণ করেছে। এ পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন সবাই বাদীনির পক্ষে সাক্ষী দিয়েছে। আসামি বাদীনিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। সাক্ষী শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।তার আগে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একই সঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে নজরদারির মধ্যে রাখে।

এরপর ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামুনুলকে। পরে এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।