ইসলামিক ডেস্ক:
মায়ের সঙ্গে সবার সুখ স্মৃতি থাকে। সন্তানের চাওয়া থাকে মা যেন আমৃত্যু তার সঙ্গে থাকে, মায়ের মায়ার আঁচলেই কেটে যায় তার জীবন। কিন্তু সবার জীবনের চাওয়া পূরণ হয় না।
মাকে সবসময় সঙ্গে পেলে জীবনে যে আর কোনো দুঃখ, চিন্তা থাকে না, তা বুঝে উঠার আগেই অনেকে হারিয়ে ফেলেন মাকে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামও ছিলেন এমন এতীম শিশুদের একজন, যিনি শৈশবে মাত্র ৬ বছর বয়সে নিজের মাকে হারিয়েছিলেন।
যার সঙ্গে তার সুখ স্মৃতি বা স্মৃতি খুব একটা ছিল না। নবীজির জন্মের আগেই পিতা ইন্তেকাল করেন। শিশু মুহাম্মদের জন্মের পর তার চাঁদ মাখা মায়াবী চেহারা দেখে স্বামীর দুঃখ ভুলার চেষ্টা করেন মা আমেনা। কিন্তু সন্তানকে বেশি দিন কাছে রাখতে পারলেন না তিনি। আরবের তৎকালীন রীতি মেনে দিয়ে দিতে হলো দুধ মায়ের কাছে।
আরবের তৎকালীন রীতি ছিল, শহরের শিশুদের গ্রামের সিগ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য কোনো দুধ মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হতো। দুধ মায়ের কাছে মুহাম্মদ সা.-কে তুলে দেওয়ার পর আবারো একা হয়ে গেলেন কিছুদিন আগে স্বামী হারানো আমেনা।
নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর শিশু মুহাম্মদ সা.-কে মা আমেনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিশু মুহাম্মদকে ফিরিয়ে দিতে কোনোভাবে মন সায় দিচ্ছিল না দুধ মা হালিমার।
কারণ, শিশু মুহাম্মদকে যেদিন তিনি প্রথম কোলে নিয়েছিলেন সেদিন থেকেই এমন সব বরকত দেখা দিয়েছে তার জীবন ও সংসারে যা এর আগে কখনো পাননি তিনি। কিন্তু মনের বিরুদ্ধে অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি মুহাম্মদ সা.-কে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে গেলেন।
দীর্ঘ দিন পর কোলের ধন ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন মা আমেনা। হালিমার কাছে মুহাম্মদের বেড়ে ওঠার দিনগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তার প্রতিদিনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আন্তরিকভাবে হালিমার আপ্যায়ন করলেন।
হালিমা যখন মুহাম্মদ সা.-কে ফিরিয়ে দিতে এসেছিলেন তখন মক্কার আবহাওয়া প্রচণ্ড বৈরী ছিল, বিভিন্ন জায়গায় রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মা আমেনা ও পরিবারের অন্যদের কাছে মুহাম্মদ সা.-কে মক্কার বাইরে রাখাই সুবিধাজনক মনে হলো। তাই তারা আবারো হালিমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন মুহাম্মদ সা.-কে। এতে হালিমার খুশির অন্ত রইলো না।
মুহাম্মদ সা. দুধ মায়ের কাছে পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকলেন। এর মধ্যে সিনা চাক বা বক্ষ বিদারণের ঘটনা ঘটলো। এতে হালিমা খুব ভয় পেলেন। এ ঘটনার পর তিনি মুহাম্মদ সা.-কে একেবারেই ফিরিয়ে দিলেন মা আমেনার কাছে।
সন্তানকে ফিরে পেয়ে আমেনার খুশির সীমা নেই। তাকে দেখে, তার যতœ নিয়ে সময় কাটে মা আমেনার। এভাবে বেশকিছু দিন কাটলো। এর মাঝে মা আমেনার ইচ্ছা জাগলো শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মদিনায় গিয়ে স্বামী কবর জিয়ারত ও মায়ের বাড়ি ঘুরে আসার।
তিনি আব্দুল মুত্তালিবকে জানিয়ে দাসী উম্মে আয়মানকে নিয়ে মদিনায় গেলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে এক রাতে ইন্তেকাল করেন তিনি। মায়ের ইন্তেকালের সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। এরপর তিনি লালিত-পালিত হলেন দাদা আব্দুল মুত্তালিবের স্নেহে। কিন্তু দাদার স্নেহ ছায়ায় দীর্ঘ হলো না তার ওপর।
(আর রাহীকুল মাখতুম, ৭৪, সীরাতুন্নবী সা. ১/১৬৪)