মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা তহবিল পাশ- জয়ের আশা ইউক্রেনের!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
বহুল প্রতীক্ষিত মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বিল শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হয়েছে। এক দিনে তিনটি বিল পাশ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা বিল, ইসরায়েলের নিরাপত্তা সহায়তা বিল এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষ করে তাইওয়ানের নিরাপত্তা সহায়তা বিল। ইসরায়েল এবং তাইওয়ান নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও বিলগুলো মূলত ইউক্রেনের কারণে আটকে ছিল।
রিপাবলিকানদের একটি বড় অংশ ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকানদের অনেকেই বিলটিতে সমর্থন দেওয়ায় পাশ হতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। বহুদিন ধরেই ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বারবার বিলটি পাশের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছিল। কারণ যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়া ক্রমেই ইউক্রেনকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। বিল পাশ হওয়ায় ইউক্রেন আশায় বুক বাধলেও জয় আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার যে বিল পাশ হয়েছে তাতে কেবলই গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ বাড়বে এবং তেলআবিব নিরাপদ শহর হিসেবে পরিচিত রাফায়ও অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যেভাবে বিলটি পাশ- গত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে গত ফেব্রুয়ারিতে ৯৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বা সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের বিলটি পাশ হয়। তিনটি বিল উত্থাপন করা হয় আলাদাভাবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সহায়তা বিলটি পাশ হয় ৩১১-১১২ ভোটে। ১০১ জন রিপাবলিকান বিলটির পক্ষে, ১১২ জন বিপক্ষে এবং ২১০ ডেমোক্র্যাটের সবাই পক্ষে ভোট দেন। শনিবারের অধিবেশনে ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই সমর্থকরা ইউক্রেনের পতাকা নেড়ে উল্লাস ও হাততালি দিতে শুরু করে। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইউক্রেনের সহায়তা প্যাকেজ অবশেষে অনুমোদিত হয়েছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার পর প্রতিনিধি পরিষদ করতালিতে ফেটে পড়ে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে ও অংশিদারদেরকে ৬১ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা সহায়তা বিলটি পাশ হয় ৩৬৬-৫৮ ভোটে। তেলআবিবকে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহায়তা দেওয়া হবে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি।
৬১ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেন এবং এই অঞ্চলে অন্যান্য দেশকে দেওয়া হবে যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রায় ২ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন অস্ত্র, মজুত এবং সুবিধাগুলো পুনরায় পূরণ করতে ব্যবহার করা হবে এবং ১ হাজার ১০০ বিলিয়নেরও বেশি এই অঞ্চলে বর্তমান মার্কিন সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করবে। বিলটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে সহায়তা করবে। বিলটি পাশের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রতিনিধি পরিষদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটি পাশের পর জানিয়েছেন, দ্রুত ইউক্রেনকে সহায়তা পাঠানো হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব আমেরিকান নেতৃত্ব সম্পর্কে ধারণা পেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো সহায়তা পেয়ে ইউক্রেন রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে পারবে কিনা। ব্রিটেনভিত্তিক স্কাই নিউজের সাংবাদিক মার্ক স্টোনের মতে, ইউক্রেনকে রাশিয়া কোণঠাসা করে ফেলেছে। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সৈন্যদের কাছে প্রয়োজনীয় বুলেট এবং রাইফেল পর্যন্ত নেই। ফলে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, রাশিয়া যে সম্প্রতি সফলতা পাচ্ছে তার কারণ ইউক্রেনের দুর্বল আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এই সহায়তায় ইউক্রেনের সেনাদের মনোবল বাড়বে। তারা অস্ত্রশস্ত্র পাবেন। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। ফলে রাশিয়ার হামলা আপাতত মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। তবে তিনি বলেন, এই সহায়তা রাশিয়াকে রুখতে যথেষ্ট নয়। কারণ ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। আর রাশিয়ার নিজস্ব উত্পাদন ক্ষমতা রয়েছে। আবার চীন ও উত্তর কোরিয়াও সহায়তা দিচ্ছে। এমনকি ইরানও। গত কিছু দিন ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুত্ অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের উত্পাদন মাত্র ১২ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আবার বিগত ৪৮০ দিন পর ইউক্রেনকে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও যদি এমন সমস্যা হয় তাহলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের টিকে থাকা কঠিনই হবে বলে মনে করেন মার্ক স্টোন।
ইসরায়েলকে দেওয়া হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা। এই প্যাকেজে রয়েছে- আয়রন ডোম এবং ডেভিড স্লিং মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ৪০০ কোটি ডলার। আয়রন বিম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ইসরায়েলকে দেওয়া প্রতিরক্ষা আইটেম এবং পরিষেবাগুলো পুনরায় পূরণ করতে ৪০৪ কোটি ডলার প্রয়োজন। বিদেশি সামরিক অর্থায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আইটেম সংগ্রহের জন্য ৩০৫ কোটি ডলার, জরুরি খাদ্য, আশ্রয় এবং মৌলিক পরিষেবাসহ সংকটে ভুগছেন এমন মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তায় ৯০২ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। ইসরায়েলের প্রযুক্তির অভাব নেই। আছে অস্ত্রশস্ত্রও। গাজাকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। সেই ইসরায়েলকেই আবার অর্থ ও সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে গাজায় তথা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা প্রায় বাড়তে পারে। এতে ইসরায়েলের গাজায় হামলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। গতকাল কংগ্রেসের বাইরে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সেই প্রতিবাদকে পাত্তা দিচ্ছে না। বরং ইসরায়েলের নিরাপত্তায় কঠোর সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।