মালা খানকে বরখাস্তসহ ৫ দফা দাবি বিআরআইসিএম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) প্রাক্তন মহাপরিচালক মালা খানকে প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত এবং গবেষক মশিউর রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তিসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের দাবি, মালা খান একজন চিহ্নিত স্বৈরাচারের দোসর হওয়ার পরও এবং ৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সাবেক মন্ত্রী ইয়াসেফ ওসমানের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠকের পরও এখনও মালা খান বহাল তরবিয়তে আছেন। এমনকি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি করে যাচ্ছেন।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব দাবি জানান।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিআরআইসিএমের সিনিয়র সাইন্টিস্ট অফিসার জাবেদ বিন আহমেদ। এসময় তিনি বলেন, যেই মুহূর্তে আমরা এ সংবাদ সম্মেলন করছি ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের সহকর্মী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মালা খানের দুর্নীতি-অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমান মিথ্যা মামলার আসামি হিসেবে কারাবরণ করছেন। কিন্তু অবৈধ পিএইচডি ডিগ্রিধারী, দুর্নীতিপরায়ণ এবং গোপন আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা মালা খান এখনও বহাল তবিয়তে। এমনকি গত ৫ আগস্টের পূর্বে যারা ছাত্র জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তাদের মামলা-হামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী সমাজের এক কলঙ্ক ও অভিশাপ মালা খান। দেশের সচেতন গবেষক মহল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়টি অবগত থাকলেও বিগত ১৫ বছর ধরে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিজ্ঞান মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শেখ তাপসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে বিআরআইসিএম’র চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার পদে নিয়োগ পান, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক পদটিও বাগিয়ে নেন। এই প্রতারক আওয়ামী সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে শত কোটি টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নিয়ে কোটি টাকা লুটপাট করেন।
জাবেদ বিন আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য মালা খান ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামি সরকারের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বিআরআইসিএম প্রাঙ্গণে কয়েক দফা বৈঠক করেন। এমনকি বিআরআইসিএমএর বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও রিসার্চ ফেলোরা যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপর ছিলেন তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি আবার গিরগিটির মতো রং পাল্টিয়ে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের পিছনে ছুটছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর বিআরআইসিএমে মালা খানের দুর্নীতি, জালিয়াতি, টেন্ডারবাজি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বক্তব্য দিয়েছিলেন বিআরআইসিএমের গবেষক মশিউর রহমান। যে কারণে মালা খানের প্রথম টার্গেট হয়েছেন তিনি। আজ আমরা যারা বক্তব্য দিচ্ছি তারাও হয়ত টার্গেটে পরিণত হয়ে মশিউর রহমানের মত হয়রারিমূলক মামলায় কারাবরণের শিকার হতে পারি। আমরা মনে করি মশিউর রহমানকে মামলায় জড়ানো ওসি মোহাম্মদ মহসিন উদ্দিনের সঙ্গে মালা খানের যোগসাজশ রয়েছে এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমানের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা দ্রুততম সময়ে আমাদের সহকর্মী মশিউরের মুক্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো-
১. অনতিবিলম্বে মালা খানকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ১০ কর্মদিবসেরে মধ্যে বিনা ব্যর্থতায় সম্পন্ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন ও অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. অনতিবিলম্বে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে আনা সব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে তার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
৩. মশিউর রহমানসহ বিআরআইসিএমের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হুমকি-হয়রানির সাঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হয়রানিমূলক মামলা বাণিজ্যকারী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. বিআরআইসিএমের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আমলে নিয়ে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।