ঢাকা প্রতিনিধি:
মিছিল নিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসা আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তার জন্য আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাহমুদুর রহমান পুরান ঢাকার জনসন রোড দিয়ে হেঁটে আসেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দিকে। এসময় তার সঙ্গে বেশকিছু অনুসারী ছিল। তাদের মিছিলের সামনে ছিল একটি প্রাইভেট কার। তারও সামনে ছিল দুইটি পিকাপ। তখন অনুসারীরা হুঁশিয়ার সাবধান বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে তারা আদালতের গেটের সামনে আসলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে মিছিলসহ আদালতে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে তাদেরকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে আগে থেকেই আদালতের প্রধান গেটের বাইরে সারিবদ্ধভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছেন তারা। এছাড়া আদালত ভবনের বাইরেও কড়া সতর্কতায় আছেন সেনা সদস্যরা।
এদিকে মাহমুদুর রহমান সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি। তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, আজ বেলা ১১টায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান। আমরা এ মামলায় আপিলের শর্তে জামিন চাইবো।
মাহমুদুর রহমান জামিন পাবেন কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার সাত বছরের সাজা হওয়ায় সিএমএম আদালতের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার নেই। পৃথক দুই ধারায় তার সাজা হয়েছে; সেক্ষেত্রে পৃথক ধারায় সংশ্লিষ্ট আদালতে আপিল করা হবে। আমরা আপিলের শর্তেই তার জামিন আবেদন করব। একইসঙ্গে কারাগারে তাকে যেন ডিভিশন দেওয়া হয় সেই আবেদন করা হবে।
তিনি বলেন, তার (মাহমুদুর রহমান) বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। আপনারা দেখেছেন কীভাবে এই মামলার বিচার শেষ করা হয়েছে। রায় ঘোষণা করা বিচারকের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
জানা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন— জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এদিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেন মাহমুদুর রহমান। দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আমলে আমার ৫ মাস কারাগারে থাকতে আপত্তি নেই। হ্যাঁ আমার বয়স হয়েছে, আমি বুড়ো হয়ে গেছি, কিন্তু জেলে থাকার মতো মানসিক এবং শারীরিক শক্তি এখনও আমার আছে। কাজেই আপনারা এটা নিয়ে একদম বিচলিত হবেন না। একদম উদ্বিগ্ন হবেন না। আইনকে তার রাস্তায় যেতে দিন। আমাকে আমার মতো করে লড়াই করতে দিন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমি আমার মতো করে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে লড়াই করে গেছি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতো করে লড়াই করেছে, আর আমি লড়াই করেছি আমার মতো করে।’