ইসলামি ডেস্কঃ
সুরা বাকারার ৮-১০ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, কিছু মানুষ এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর ও বিচার দিবসের ওপর’, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহ এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে; মূলত তারা নিজদেরই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি, আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।
নেফাক অর্থাৎ মুখে আনুগত্য, অন্তরে শত্রুতা যে কোনো রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যই গুরুতর সমস্যা। মুনাফিকদের শত্রুতা অনেক ক্ষেত্রে বহিঃশত্রুর শত্রুতার চেয়ে বেশি বিপদজনক হয়। সাধারণ জ্ঞানে আমাদের মনে হয় মুনাফিকদের যতো দ্রুত সম্ভব নির্মূল করে ফেলা উচিত যেন রাষ্ট্র তাদের ক্ষতি রেখে বাঁচতে পারে। রাষ্ট্রগুলো সব যুগে নেফাকের বিরুদ্ধে এ রকম কঠোর ব্যবস্থাই নিয়েছে।
কিন্তু আল্লাহর প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল মুনাফিকদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা। তাদেরকে ছাড় দেওয়া, সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। যেন তাদের কিছু মানুষ ভুল বুঝতে পেরে হেদায়াত লাভ করার সুযোগ পায় এবং ঐশী জ্ঞানের প্রশস্ততার সামনে নিজেদের জ্ঞানের স্বল্পতা মানুষের সামনে স্পষ্ট হয়। অনেকবার নবিজি (সা.) মুনাফিকদের শত্রুতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু শেষে বিজয় তারই হয়েছে।
মুনাফিকদের সাথে ইহুদিদের স্বভাবের অনেক মিল পাওয়া যায়। ইহুদিদের মতোই এরা ছিল ভীরু, নীচ ও শঠ। প্রকাশ্যে মানুষের সাথে মিষ্টি কথা বলতো, অন্তরে বিষ লুকিয়ে রেখে বিনয় প্রকাশ করে করতো।
এ আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় মিথ্যা বলা মুনাফিকদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ মুমিনদের এ থেকে সতর্ক করেছেন। যে জাতির মধ্যে মিথ্যার বিস্তার ঘটে, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। হীন ও নিকৃষ্ট কাজের প্রসার ঘটে। নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো, মিথ্যা ইমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। (মুসনাদে আহমদ)
মিথ্যা যেহেতু মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য, স্পষ্টবাদিতা ও সৎসাহস সত্যিকার মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। এ আয়াতগুলোতে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পাশাপাশি মুমিনদেরও এ সব অপস্বভাব ও কাজ থেকে সর্তক করা হয়েছে। মুমিনরা যেন মুনাফিকদের এ সব বৈশিষ্ট্য ধারণ না করে দৃঢ়ভাবে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
মুনাফিকরা অনবরত শঠতা ও প্রতারণা করতে করতে ইমান থেকে আরও দূরে সরে যায়। কোরআন থেকে আরও বিমুখ হয়। তাদের অন্তরের রোগ বাড়তে থাকে। ইসলাম ও মুসলমানদের শান-শওকত, মর্যাদা ও সংখ্যা বাড়তে দেখে অন্তরে তারা পুড়ে যায়। নবিজি ও তার সাহাবিদের প্রতি হিংসায় তারা জ্বলতে থাকে।