মিয়ানমারের ‘তরমুজ’: বাইরে সৈন্য, ভেতরে বিদ্রোহী

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট :

বাইরে থেকে মিয়ানমারের জান্তার অধীনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে বিদ্রোহী গ্রুপের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেন তারা। বার্মিজ ভাষায় বিদ্রোহীরা তাদেরকে ‘তরমুজ’ নামে ডাকেন।

২৪ বছরের ইয়ান মিয়ানমারের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি সামরিক জান্তা সরকারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে ঝুঁকি নিয়ে গোপনে বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করতেন। গত এপ্রিলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এখন সীমান্তবর্তী একটি শহরে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে অন্যায় শাসন থেকে মুক্ত করেছি।’ ঝুঁকি এড়াতে তিনি নিজের পুরো পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

২০২১ সালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধের মুখোমুখি। বিরোধী পক্ষগুলো এখন একসাথে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। সরকারের ভেতরেও অনেকে গোপনে বিরোধীদের হয়ে কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাড়া দেয়নি জান্তা।

বিরোধীরা বলছেন সামরিক বাহিনীর ঠিক কতজন বিদ্রোহীদের কাছে তথ্য সরবরাহ করছে তা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে তারা সামরিক বাহিনীর যাতায়াতসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছেন যার ওপর ভিত্তি করে বিরোধীরা আক্রমণের পরিকল্পনা সাজাতে পারছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন পিপল’স গোল নামের একটি দলের মুখপাত্র।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তার মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে।’

ইয়ান ২০২০ সালে তার ভাইয়ের পথ ধরে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সামরিক ক্যুর পর নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক বাহিনীর নৃশংস আচরণের কারণে তার মোহভঙ্গ ঘটে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মানুষজন আমাদের দেখলে ভুত মনে করেন। তারা আমাদের ঘৃণা করেন।’

তার ভাই দেশ ছেড়ে চলে যান। ইয়ানকে তিনি জান্তাবিরোধী একটি পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এই পক্ষটির কাজই হলো ইয়ানের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। বার্মিজ ভাষায় তাদেরকে তরমুজ বলে ডকেন তারা। কেননা তরমুজের মতো তারা বাইরে থেকে সবুজ এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি অনুগত কিন্তু ভেতরে তারা লাল, যা ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রেসির রং।

ইয়ান জানান, তিনি কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফোন থেকে মেসেজ পাঠিয়ে তথ্য পাচার করতেন। জান্তার সিনিয়র ব্যক্তিরা কোথায় যাচ্ছেন, বিভিন্ন স্থানে কত পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন কিংবা কী পরিমাণ জ্বালানি ও অস্ত্র তাদের আছে সেসব তথ্য তিনি বিদ্রোহীদের কাছে সরবরাহ করতেন।

রয়টার্স জানিয়েছে স্বাধীনভাবে তারা এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি। তবে সামরিক বাহিনীর এক সদস্য জানিয়েছেন তাদের কারো পক্ষে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা কঠিন। কেউ কেউ আছে যাদের বিদ্রোহীদের প্রতি পক্ষপাত আছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট ফর পিস’-এর হিসাবে আট হাজার সদস্য নিরাপত্তা বাহিনী থেকে পালিয়েছেন।

সামরিক বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন হ্টটেট মিয়াট জানিয়েছেন, আগে যেখানে সামরিক বাহিনীর ব্যাটালিয়ানগুলোতে কয়েকশো করে সদস্য থাকতো এখন তা বেশিরভাগক্ষেত্রে ১৩০ জনের মতো সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।