মিরপুর চিড়িয়াখানায় হিংস্র হায়নার থাবায় শিশুর কব্জি বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেনঃ
রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা সাইফ নামে দুই বছরের এক শিশুর হাতের কব্জি খেয়ে ফেলেছে হিংস্র বন্যপ্রাণী হায়েনা। গুরুতর আহতাবস্থায় ওই শিশুটিকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ খবর দ্রæত ছড়িয়ে পড়লে চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার।আহত শিশু সাইফের বাবা গার্মেন্টকর্মী মো. সুমন অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে জানান, তিনি আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকালে তার স্ত্রী-দুই বছরের ছেলে সাইফসহ এলাকার আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যান। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে চিড়িয়াখানায় হায়েনার খাঁচার সামনে মায়ের কোল থেকে নেমে যায় সাইফ। তাদের অজান্তেই হঠাৎ হায়েনার খাঁচার সামনে চলে যায় সাইফ। এ সময় খাঁচায় থাকা হায়েনাটি তার ছেলের হাতে কামড় দেয়। কামড়ের একপর্যায়ে ডান হাতের কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে চিড়িয়াখানার লোকজনের সহায়তায় প্রথমে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডাক্তারের পরামর্শে তারা সাইফকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথম দফায় তার ছেলের ডান হাতের কব্জির ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এরপর থেকে সেখানেই ভর্তি রেখে সাইফকে চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে জানান আহত শিশুটির বাবা গার্মেন্টসকর্মী মো. সুমন।
এদিকে চিড়িয়াখানার সরকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত কওে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা শিশুটিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করি। পঙ্গু হাসপাতালে এখনও শিশুটিকে চিকিৎসায় সহায়তার জন্য আমাদের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি সবকিছু দেখভাল করছেন। চিড়িয়াখানার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন সময় জাতীয় উৎসবসহ স্বাভাবিক সময়ও মিরপুর চিড়িয়াখানায় বহু দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। কিন্তু এতো লোকসমাগম থাকলেও আগে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। এ ঘটনার পরপরই চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে প্রতিটি বন্দি প্রাণীর খাঁচা ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা হিংস্র প্রাণীগুলোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর সামনে অবস্থান করা দর্শনার্থীদেরও বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান চিড়িয়াখানার সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।

পঙ্গু হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, ডান হাতের কব্জি থেকে রক্তাক্ত ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আহত শিশু সাইফকে জরুরি বিভাগে আনেন তার মা-বাবাসহ চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। এরপর জরুরিভাবে শিশুটির ক্ষতস্থানে প্রথমদফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। শিশু সাইফের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলেও জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।


চিড়িয়াখানার পরিচালক জানান, আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহত শিশুটি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসে। তার বয়স দুই থেকে আড়াই বছর হবে। শিশুটির মা-বাবাই নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে শিশুটিকে নিয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে যায়। যদিও খাঁচায় নেট দেওয়া ছিল। কিন্তু শিশুটি ছোট হওয়ায় মা-বাবার অজান্তেই অসাবধানতাবশত নেটের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। তখনই শিশুটির হাত কামড়ে কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে হায়েনা এবং বিচ্ছিন্ন হাতটি খেয়ে ফেলে।
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের নিরাপত্তাকর্মী হায়েনার কবল থেকে আহত শিশুটির হাত ধরে আমাদের ভেটেনারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির হাতে মেডিসিন দেয় চিকিৎসক। পরে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাই। এছাড়া ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে অধিদপ্তর থেকে কর্মকর্তারা এসে সবকিছু ঘুরে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের তত্ত্বাবধানে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর আলাদা আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একইসঙ্গে মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয়কে আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ও বিষয়টির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে এই ঘটনার পর চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীগুলোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে বলেও জানান মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার।