মৃত্যু ছাড়া আমাদের কোনো পথ থাকলো না’

প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

মেশিন সংকটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস  সেবা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন একশ কিডনি রোগী। এতে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন রোগীরা।

সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার জহুরুল কবীর  বলেন, আমার স্ত্রীকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। জমিজমা সহায়-সম্পদ বিক্রি করে কিডনি আক্রান্ত স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে আসছি। ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা কারনোর মতো সক্ষমতা আমার নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে তিন সেশনে ১২ ঘণ্টা করে নেওয়া কথা থাকলেও মেশিন স্বল্পতা ও রোগীর চাপের কারণে দুটি সেশনের ৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা নেওয়া হয়। এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে বুধবার থেকে সপ্তাহে একবার কিডনি আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হবে।

তিনি বলেন, সপ্তাহে ৪ ঘণ্টা নেওয়া হলে অধিকাংশ রোগী বাঁচবে না। খবরটি শুনে তিনি ডুকরে কেঁদেছেন। এ যেন জীবন মৃত্যুর খবর। স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তিনি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. শীতল চৌধুরী যোগদান করেছেন প্রায় দুই বছর হতে চলেছে। যোগদানের পর থেকে এই সমস্যার কথা বলা হলেও তিনি বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সদরের ফিংড়ির একজন রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জানুয়ারি মাসে যখন মাত্র চারটা মেশিন চালু ছিল তখন আমরা ক’জন রোগী নিয়ে পরিচালকের কাছে গেলে তিনি আমাদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘এখানে ঝামেলা করেন না, বাইরে যান’।

তিনি আরও বলেন, খুলনায় আবু নাসের হাসপাতালে যান। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার নরমাল স্যালাইন শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে আমাদের সপ্তাহে একটি করে ডায়ালাইজার ও একটি করে ব্লাডলাইন রিফিলকৃত (ওয়াশকৃত) নিতে হয়। এছাড়া রক্তের ইনজেকশন ইপোটিন (ইথ্রোপোয়েটিন), বি-ক্যান ফ্লুইট, সিরিঞ্জ ইত্যাদি কিনতে হয়। এরইমধ্যে মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ নমিতা রানী ফোন করে জানান, বুধবার থেকে সপ্তাহে একটি করে ডায়ালাইসিস দেওয়া হবে। এখন মৃত্যু ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ থাকলো না।

কাঁদতে কাঁদতে শ্যামনগর বংশিপুরের কিডনি রোগী জয়নাল বলেন, ‘আমার মা গ্রামে গ্রামে ও হাট-বাজারে ভিক্ষা করে আমার ডায়ালাইসিস খরচ চালান। এখন যদি এখানে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেয় তাহলে যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হবে। কারণ প্রাইভেটে ডায়ালাইসিস করানোর সামর্থ্য আমার নেই।’

এ ব্যাপারে ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ নমিতা রানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি  জানান, ১৯টি মেশিনের মধ্যে মাত্র দু’টি জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তাই সপ্তাহে দুই-তিনদিন ডায়ালাইসিস দেওয়া হবে না। এটি পরিচালকের সিদ্ধান্ত।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শীতল চৌধুরী জানান, অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা মেশিন পরিচালনা করায় সব মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।মোট কতটি মেশিন আছে আর নষ্ট মেশিনের সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত আমাদের মোট ডায়ালাইসিস মেশিন ১৯টি, যার মধ্যে বর্তমানে তিনটি সচল আছে।

নষ্ট মেশিনগুলোর মেরামত প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটাতো দীর্ঘ প্রসেসের ব্যপার। মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মেরামতের জন্য কয়েক দফায় টেকনিশিয়ানও এসেছে, কিন্তু খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়া যাওয়ায় ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত মেরামত করার চেষ্টা করছি।