জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
রমজানের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে এক টাকা লাভে ইফতার পণ্য বিক্রি করছে মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবীমূলক যুব সংগঠন।
সংগঠনটি বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে কিনে আনা খাদ্যপণ্য মাত্র এক টাকা লাভে বিক্রি করছেন। শুধু তাই নয় পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গরিব অসহায়দের মধ্যে বিনামূল্যে ঈদ সামগ্রীও বিতরণ করবে তারা। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সচেতন মহল। এক টাকা লাভের পণ্য পেয়ে খুশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ। সংগঠনটি বলছেন, প্রতি রমজান মাসেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ইফতারসহ খাদ্যমূল্যের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এ বছর ইফতার ও নিত্য প্রয়োজনী খাদ্য সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। সাধারণ মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী কিনে খেতে পারেন সে লক্ষ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর গ্রামে স্বেচ্ছাসেবীমূলক একটি যুব সংগঠন বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী কিনে এনে তা প্যাকেটজাত করে রমজানের শুরু থেকে মাত্র এক টাকা লাভে বিক্রি কার্যক্রম চালু করছেন। এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করায় তারা এলাকায় যেমন প্রসংশিত হচ্ছেন তেমনি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ পণ্য কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। বিক্রিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, খেজুর, ছোলা, চাল, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, আলু, লবণ, চিনি, সেমাই ইত্যাদিসহ বিভিন্ন সবজি।
সুবিদপুর গ্রামের যুব সংগঠনের আয়োজনকৃত এক টাকা লাভে পণ্য কিনতে আসা আসমা বেগম বলেন, প্রথমত আমরা হাতের নাগালেই পণ্য কিনতে পারছি। দামও কম। সেই সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির যে টাকা লাভ হবে তা ওই সংগঠনের ছেলেরা না নিয়ে এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করবে। এটি অনেক ভালো উদ্যোগ।
ক্রেতা আজগার আলী বলেন, সকাল থেকে সারাদিন গ্রামের কিছু যুবক মাত্র এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করায় আমরা প্রথম রোজা থেকেই এখানে সব কিছু কিনে থাকি এবং শেষ পর্যন্ত কিনব। আমাদের কাছে লাভকৃত টাকা দিয়ে ছেলেরা বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করবে। এতে আমিও অংশীদারিত্ব হতে পারছি।শুধু আসমা বেগম বা আজগার আলীই নয়, গ্রামের সব মানুষই এখন এক টাকা লাভের বাজারে এসে ইফতার ও খাদ্যপণ্য কিনছেন প্রতিনিয়ত।
কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, সুবিদপুর যুব সম্প্রদায় এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন এমনটি আমি জানতে পেরেছি। এমন একটি উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। আমি নিশ্চয় এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে প্রতি বছরই আমি এমন সংগঠনের পাশে থাকতে চাই।
যুব সংগঠনটির সভাপতি রাহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমান বাজারমূল্যের দিক বিবেচনা করে আমার এলাকার মানুষকে স্বল্পমূল্যে এবং মাত্র এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রির বিষয়টি স্থানীয় মুরুব্বিদের সঙ্গে আলাপ করি। এতে ভালো সাড়া পেয়ে প্রথম রমজান থেকে একটি স্থানে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিক্রি শুরু করি। এলাকায় জানাজানি হলে আমাদের এক টাকা লাভের বাজার থেকে সবাই সব কিছু কিনছেন। এক মাস খাদ্যপণ্য বিক্রি করে যে টাকা লাভ হবে তা আমরা না নিয়ে সব টাকার ঈদ সামগ্রী কিনে গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
এমন উদ্যোগের কথা জানতে পেরে মেহেরপুর অঞ্চলের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ ও জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক এক টাকা লাভের বাজার পরিদর্শনে আসেন। একই সঙ্গে এক টাকা লাভের বাজারে দেড় শতাধিক প্যাকেট সেমাই বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, একটি এলাকার যুব সমাজ ইচ্ছে করলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে। সুবিদপুর গ্রামের যুব সম্প্রদায় যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা অনেক ভাল উদ্যোগ। এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রির যে লাভ হবে উক্ত টাকা তারা নিজেরা না নিয়ে অসহায় মানুষকে ঈদ সামগ্রী কিনে দেবেন এ উদ্যোগটিও মানবিক উদ্যোগ। আমরা যে যেভাবে পারি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব এটাই মানুষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।