মেহেরপুরে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি, চড়া দামে নেই ক্রেতা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর
পাঁচ বছর যাবৎ তরমুজ উৎপাদন না হওয়ায় আমদানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মেহেরপুর জেলা। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তরমুজ দিয়ে জেলার চাহিদা পুরুণ করেন ব্যবসায়ীরা। গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ আমদানি নির্ভর ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা। বিভিন্ন জেলা থেকে অল্প দামে তরমুজ কিনে বেশি দামে বিক্রি করায় হিমশিম খেয়ে পড়েন ক্রেতা সাধারণ।
ক্রেতারা বলছেন দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তরমুজ কিনতে পারছেন না। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই দাম বেশি। এছাড়া অপরিপক্ক তরমুজ বাজারে আসায় তরমুজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় অন্যান্য সময় পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও গেল কয়েক বছর রমজান থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়। চলতি রমজানের শুরু থেকেই চড়া দামে কেজি ওজনে তরমুজ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একদিকে যেমন চড়া দাম অন্যদিকে অপরিপক্ক তরমুজ বাজারে আসায় ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিহা।
এদিকে চড়া দামে তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় পচে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের অবিক্রীত তরমুজ। কেজি প্রতি ১০ টাকা দাম কমিয়েও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। রোজার শুরুতে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল তরমুজ। তবে গেল কয়েকদিন ৫০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে।
মেহেরপুর গাংনী বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী শাহিন জানান, তরমুজ আমদানি করেছিলেন রোজার তিন দিন আগে। কিন্তু ১০ দিনেও তা বিক্রি করতে পারেননি। এখন অবিক্রীত তরমুজ পচার উপক্রম। ১০ টাকা কমে ৬০ টাকা কেজি দরে হাঁকিয়ে ক্রেতা ভিড়ানো যাচ্ছে না। অতিরিক্ত দামে ক্রেতারা কেউ তরমুজ কিনতে চাচ্ছেন না। তাছাড়া তরমুজ কিনে অপরিপক্ক হওয়ায় ঠকছেন ক্রেতারা।ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, ‘এবার একেবারে বাড়তি দাম। তরমুজের দাম শুনেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। ৫০ টাকা কেজির নিচে দাম হলে ভালো হতো। তাহলে ক্রেতারাও কিনে খেত, আমাদেরও বিক্রি বাড়ত।’
আরেক ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনকার ব্যবসায়ীরা নাটোর, পটুয়াখালী ও বরিশাল মোকাম থেকে পাইকারি দরে তরমুজ কিনি। কিন্তু এবার মোকাম থেকে বেশি দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। সেখানে এক মণ তরমুজ ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই দামও বেশি চাওয়া হচ্ছে। দাম শুনেই ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন। রোজার আগের দিন তরমুজ নিয়ে এলেও অর্ধেকেরও বেশি পড়ে আছে। কিছু তরমুজ পচেও গেছে। বাজারে বাড়তি দামে একেবারে ক্রেতা নেই তরমুজের।’
এদিকে রমজান মাসের আগ থেকেই মেহেরপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছে গ্রীষ্মের রসাল ফল তরমুজ। মৌসুমের শুরুতে এ ফল ক্রেতাদের আকর্ষণ করলেও দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি শুরু হয় ৭০ থকে ৮০ টাকা দরে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই তরমুজ এখন ১০ টাকা কমে পাওয়া গেলেও ক্রেতারা তা কিনতে নারাজ। তাই ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন তরমুজ ব্যবসায়ী শাহিন। গাংনী বাজারের তরমুজ গোডাউনের আশপাশে ঘুরছিলেন দিনমজুর মুছা কলিম। তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যে তরমুজ খাওয়ার স্বাদ থাকলেও কেনার সাধ্য নেই । কারণ ৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম চাওয়া হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকা। দিনে যা রোজগার করি, তা যদি তরমুজ কিনে খাই, তাহলে পেটের ভাত জোগাড় হবে কীভাবে।’ পরে কোনো দিন দাম কমলে কিনে খাবেন বলে জানান মুছা কলিম।
তরমুজ কিনতে আসা সদর উপজেলার ষোলমারি গ্রামের আবু বক্কর বলেন, একটা বড় আকারের তরমুজ কিনতে গেলে ৪০০–৫০০ টাকা লাগবে। একজন নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে তরমুজ কেনা খুব কঠিন। তরমুজের দাম ১০০ থেতে ১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলে ভালো হয়।
মেহেরপুর সাহারবাটি গ্রামের তরমুজ চাষি ইয়াছিন আলী জানান, সাহারবাাটি গ্রামে এক সময় মাঠ জুড়ে শুধু তরমুজ আবাদ হতো। ভাইরাসজনিত রোগের পাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় তরমুজ লতায় ফুল আসার আগেই গাছ মারা যাওয়া শুরু করে। এতে আমাদের মোটা টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে কয়েক বছর। অনেক চেষ্টা করেও তরমুজের আবাদ করতে পারিনি। সাহারবাটি মাঠের উৎপাদিত তরমুজ দিয়েই জেলার চাহিদা পুরুণ করা হতো। এখন আর তা হয় না। তাই তরমুজের জন্য বিখ্যাত মেহেরপুর জেলা এখন আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তরমুজের আবাদ করার ইচ্ছে থাকলেও তা রোগের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে আবারও তরমুজ চাষে আগ্রহ পেতাম।
জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, দাম বেশি নেওয়ায় রমজানের শুরু থেকে তরমুজের বাজার মনিটরিং করছি। কয়েকজন তরমুজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কেজি দরে নয় পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রির জন্য বলা হচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃঞ হালাদার বলেন, মেহেরপুরে আগের মতো আর তরমুজের আবাদ হয় না। আবহাওয়ার কারণে তরমুজ চাষিরা দফায় দফায় লোকসানে আবাদে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা। আমাদের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে আগামীতে তরমুজ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করব।