মোটরসাইকেলের হেডলাইটের আলো ও ছায়া দেখে শনাক্ত হলো পাঠাও-চালক হত্যাকাণ্ডের আসামি

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর মিরপুরে পাঠাও-চালক সুরুজ আলী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে, মোটরসাইকেলের হেডলাইটের আলো এবং অপরাধীদের হেঁটে যাওয়ার ছায়া সিসিটিভিতে ধরা পড়ার পর তার সূত্র ধরে উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আটজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা গেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা এরই মধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি চারজনকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে কাফরুল থানা পুলিশ। এই চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেল টার্গেট করে ছিনতাই করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কাফরুল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন ভোর তিনটার দিকে রাজধানীর কাফরুল এলাকার ইব্রাহিমপুরের বনমালা রোডে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হয় পাঠাও-চালক সুরুজ আলী। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সুরুজ আলীর স্ত্রী বন্যা আক্তার বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। তারপর থেকেই ঘটনার তদন্তে নামে কাফরুল থানা পুলিশ।

মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঠাওয়ে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী সজীবকে গতকাল সোমবার (২৬ জুন) ভোরের দিকে গ্রেফতার করা হয়। সে আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। আসামিরা হলো- আমির, জয় ও সিফাত। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করে পুলিশ, যা সজীবকে সরবরাহ করেছিল সিফাত।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠাও-চালক সুরুজকে টার্গেট করে ছিনতাইচক্রের সদস্যরা। যাত্রীবেশে সজীব রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মিরপুরে যাওয়ার জন্য পাঠাও মোটরসাইকেলে ওঠে। আগে থেকে নির্ধারণ করা স্থান কাফরুল এলাকার ইব্রাহিমপুরের বনমালা রোডের শেষ প্রান্তে মোটরসাইকেল চালককে নিয়ে আসতে চাইলে চালক বেশি ভেতরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। কারণ তখন সময় ছিল ভোর তিনটার আশেপাশে। অপারগতা প্রকাশ করলে সজীবের সঙ্গে পাঠাও-চালক সুরুজের কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে সজীব নিজের কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র (চাকু) বের করে সুরুজের পেটে আঘাত করে। সজীব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও সুরুজ নিজের মোটরসাইকেলটি নিয়ে একাই চালিয়ে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই সে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। পথে বেশ কয়েকজনের কাছে সহায়তা চাইলেও কেউ এগিয়ে আসে না, বেশখানিক পরে একজন এগিয়ে আসে।

পুলিশ আরও জানায়, নিজের সঙ্গে থাকা একমাত্র অবলম্বন মোটরসাইকেলটি যেন হাতছাড়া না হয় সেজন্য তিনি চিকিৎসা না নিয়ে এগিয়ে আসা ব্যক্তির কাছে সহায়তা চান তাকে কালসির ভাড়া বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এ সময় তার পকেটে ৬০০ টাকা ছিল। চিকিৎসায় টাকা ব্যয় হয়ে গেলে পরিবারের খাবার জোটবে না এমন তথ্য জানায় সহায়তা করতে আসা ব্যক্তিকে। পরে একজন ব্যক্তি তাকে কালসি ভাড়া বাসায় তার স্ত্রীর কাছে রেখে আসে। রাতে ছুরিকাঘাতের শিকার হবার পরদিন সকালে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পাঠাও-চালক সুরুজকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ বলছে, পল্লবীতে একটি লন্ড্রির দোকানে কাজ করতো সুরুজ। এখান থেকে আয়-রোজগার কম হওয়ায় বাড়তি আয়ের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ করতো।

স্বামী হারিয়ে অভাবের সংসারে ছোট দুই সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না জানিয়ে মামলার বাদী সুরুজের স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। তাদের কঠোর শাস্তি হোক।

অভিযান পরিচালনাকারী কাফরুল থানার এসআই সাইফুল ইসলাম সোমবার (২৬ জুন) রাতে বলেন, ঘটনাস্থলের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ না পেলেও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা শুরু করি। ঘটনাস্থলের বেশকিছু বিষয় সম্পর্কে অবহিত হই। মোটরসাইকেলের হেডলাইটের আলো এবং দৌড়াদৌড়ির ছায়া অপরাধী শনাক্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল ইসলাম বলেন, পাঠাও-চালক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আটজন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি চারজনকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, গ্রেফতার চারজন টার্গেট করে মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। তারই ধারাবাহিকতায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রীবেশে পাঠাও-চালক সুরুজকে টার্গেট করে। টার্গেটকৃত জায়গায় নিয়ে যেতে না পেরে কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় সজীব।