মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে পার্টটাইম চাকরির নামে প্রতারণায় গ্রেফতার ৮

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম:

‘অনলাইনে চাকরি করুন, বেতন প্রতিদিন ১ হাজার ৫০ টাকা’ সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে এমন ক্ষুদে বার্তায় লোভনীয় বেতনে চাকরি প্রস্তাব। অথবা অনলাইনে কয়েক ঘণ্টা কাজ করে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয়ের প্রস্তাব। যোগাযোগের জন্য দেওয়া হয় একটি লিংক। এ লিংকে ক্লিক করে ভয়াবহ এক প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেন ব্যবহারকারীরা। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে লোভনীয় চাকরি ও টাকা বিনিয়োগে কয়েক ঘণ্টায় দিগুণ লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যন্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) বিভাগ। ডিবি বলছে, এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড দুই চীনা নাগরিক লিও ও এলিওএন। তারা বিদেশে বসে দেশীয় এজেন্ট ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে এ চক্রের সন্ধান পেয়েছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়-চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট, ইমাদুল ইসলাম (২১), মো. আবু বক্কর সিদ্দিকি শান্ত (২১), মো. জাবের আহাম্মেদ (৩১), মো. রাকিব মোল্লা (১৯), মোহাম্মদ আলী (১৯), মো. সোলাইমান (১৯), আবু সাইদ সুমন (৩৩) ও হোসনাহার আক্তার হেমা (২৩)। রাজধানী ঢাকার সাভার ও জামালালপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, অনলাইনে পার্ট টাইম জবের মাধ্যমে লোভনীয় বেতনের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া বাংলাদেশি ও চীনা নাগরিকের সংঘবদ্ধ চক্রের ৮ জন বাংলাদেশি প্রতারকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর এক ভুক্তভোগীকে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তায় অনলাইনে কাজের প্রস্তাব দেয়। কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীকে বলা হয় সরবরাহ করা সাইটে প্রবেশ করে ভোট ও রিভিউ দিতে হবে। এমন প্রতিটি কাজের বিনিময়ে ১৫০ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর বিশ্বাস অর্জন করতে বিভিন্ন সময় মোবাইল ব্যাংকের নম্বরে প্রায় ৮ হাজার টাকা পাঠায়। এরপর ভুক্তভোগীকে তাদের দেওয়া মোবাইল ব্যাংক নম্বরে ৯ হাজার টাকা পাঠাতে বলে।

হারুন অর রশীদ বলেন, এ টাকা পাঠানোর পরে ভুক্তভোগীকে একটি ওয়েবসাইটে ঢুকে অ্যকাউন্ট খুলতে বলে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এ অজুহাতে অ্যকাউন্টের টাকা আটকিয়ে দেয় এবং কাজ শেষ করতে আরও ৩৬ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। বিভিন্ন অজুহাতে ৩৬ হাজার টাকাসহ মোট নয় লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, গ্রেফতাররা সবাই সি-ফ্যাইনান্স ও অনলাইনে লোন দেওয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা এ চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। চক্রটি মানুষকে অনলাইনে টাকা উপার্জনের কিংবা পার্ট টাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।

গ্রেফতার সোহান গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, তার পূর্বপরিচিত জাবেরের মাধ্যমে সি-ফ্যাইনান্স, লোন অ্যাপস, হানি ট্রাপস অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণা জন্য বিভিন্ন কোম্পনির সিমের অর্ডার পায়। পরে সে বিষয়টি শান্তকে জানালে সে রাজি হয়ে যায়। এরপর তারা প্রতিটি সিম ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনে পরে সেগুলো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় সোহানের কাছে বিক্রি করে। সোহান সেই সিম জাবেরের কাছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এ প্রতারণা চক্রের মূল হোতা চায়না নাগরিক লিও এবং এলওইন। তাদের পরিকল্পনায় ঢাকার উত্তরা এবং জামালপুর জেলায় থাকা প্রতিনিধিরা কাজ করতো।

চীনা নাগরিক লিও এবং এলওইনের নির্দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হতো টাকা। এরপর সেই টাকা পাচার করার জন্য প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির টাকার বিনিময়ে তথ্য নিয়ে খোলা হতো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য মোবাইলের মাধ্যমে চীনা নাগরিকদের কাছে পাঠাতেন হেমা।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতাররা শিক্ষিত এবং সবাই তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ। তারা স্বল্প সময়ে অধিক উপার্জনের আশায় এ প্রতারণার কাজে জড়িয়ে যায়। আর চায়নিজ নাগরিকদের পরিচয়ের পর তাদের প্রলোভনে এবং সিএস ক্যামস্ক্যানার সহায়তায় তারা কাজে যুক্ত হয়।