মোশারুলের মোটরসাইকেলে উঠার নির্দেশনা!

প্রকাশিত: ৫:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,ঠাকুরগাঁওঃ 

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাত না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনী মাঠে চলছে ঠিক এর উল্টোটা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ভোটারদের অভিযোগ তাদের প্রবাহিত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রচারণাতেও জনপ্রতিনিধি ও আ.লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন এমপির সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে যেন কেউ না যায়।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের সদস্য পদে পরাজিত হয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার এবার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে তিনি একটি ইউনিয়নের চা রবার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।

ভোটারদের বক্তব্য এবারেএই প্রার্থীকে নির্বাচনে জেতাতে উঠে পড়ে লেগেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। মুখে নিরপেক্ষতার কথা বললেও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিত ও নির্দেশনা দিয়েছেন যেন মোশারুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচন করেন তারা এবং তাকে যেন ভোটাররা ভোট দেয়।

সম্প্রতি এই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে ভোটারদের উদ্দেশ্যে এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্য দিতে শোনা গেছে। এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক গণেশ চন্দ্র সেন এক নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে বলেন, এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের সন্তান (ভাতিজা) রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথি সেন তার খুব কাছের মানুষ। তার নির্দেশে আপনাদের সংশয় কাটাতে বলতে চাই এমপি সাহেবের একটাই আস্থা এবারের উপজেলা নির্বাচনে মোশারুলকে চাই।

গত শুক্রবার ১নং রুহিয়া ইউনিয়নের কালিতলাতে নির্বাচনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা গণেশ চন্দ্র সেন এবং এমন বক্তব্যের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।গতকাল শনিবার রাতে রুহিয়ার মন্ডলাধাম এলাকায় এক নির্বাচনী আলোচনা সভায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (এমপির চাচাতো ভাই) অনিল কুমার সেনও এমন বক্তব্য দেন।

সেখানে তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় অভিভাবক আমাদের এলাকার সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন আমাদেরকে মোশারুলের পক্ষে মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট করতে বলেছেন। এখানে অন্য ৩ জন প্রার্থীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তারাও আওয়ামী লীগের। কিন্তু আমাদের নেতা যে ইঙ্গিত দেবে, নির্দেশনা দেবে আমরা তার বাইরে যাব না।

এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করা অন্য প্রার্থীরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অরুনাংশু দত্ত টিটো, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন ও জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি রওশনুল হক তুষার।

এসব প্রার্থীদের দাবি, ভোটারদের যেন কোনোভাবে দলের প্রভাব দেখানো না হয়। দলীয় প্রভাব এবং ক্ষমতাসীন কোনো ব্যক্তির প্রভাব যেন দেখানো না হয় সেটাই আহ্বান থাকবে। প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে এতে করে ভোটারগণ বিভ্রান্ত হবেন। সুতরাং সকলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করুন। ভোটারগণ উন্মুক্ত চিন্তা থেকে ভোট প্রদান করুক। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জনসমর্থনের মধ্য দিয়ে যে জিতবে তার জন্য শুভকামনা থাকবে।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা এভাবে কারও চাপে একক কোনো প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ না নিয়ে সবার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার জন্য কাজ করাটায় উত্তম। যাতে নির্বাচন আনন্দ মুখোর হয়। কিন্তু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনে এমনভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে একক কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি আক্রমনাত্মক। এ নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে দিন দিন উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা ছড়াবে।

একক কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে আছেন বলে জানান।এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, দলীয়ভাবে নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগের কোনো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থন করবে না, যাতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন। নির্দেশনা উপেক্ষার জন্য জবাবদিহি রয়েছে।