মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুনের পর পানিতে ডুবেছে, ‘পানির দামে’ মিলছে চাল
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেদিন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া কিছু চালের আড়ৎ এবার ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হওয়া তুমুল বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। বাদ যায়নি দুর্ঘটনা কবলিত এ মার্কেটও।
কৃষি মার্কেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ২ জুলাই বৃষ্টির পানিতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এবার মাত্র তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে আবারও পানিতে ডুবলো বাজার। কাকতালীয়ভাবে দুদিনই বন্ধ ছিল কৃষি মার্কেট। বাধ্য হয়ে পানির দামে ভেজা চাল বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। কারণ ভেজা চাল শুকানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে চালের পাইকারি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, পানিতে ভিজে যাওয়া চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা বের করছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ জমে থাকা পানি সরাতে ব্যস্ত। এরপর ভিজে যাওয়া চালের বস্তা নামমাত্র দামে বিক্রি করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের মালিক শামসুজ্জামান। ভেজা চাল নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছেন তিনি। ক্ষতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দোকানের প্রায় ৩০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগেও একবার পানি উঠেছিল। তখনও ১০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়।
বৃষ্টি হলেই মার্কেটে পানি ওঠার কারণ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের পাশের রিংরোড মার্কেট থেকে উঁচু হওয়ায় সব দিকের পানি দ্রুত চলে আসে মার্কেটে। কোনোদিকের পানি নামতে পারে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পানি জমে মার্কেটে।
আরেক ব্যবসায়ী তাহের ট্রেডার্সের মালিক মো. ইমরান। তিনি বলেন, পানিতে ১৫০ বস্তা চাল ভিজেছে। এতে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর আগে পানি উঠে ৫০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছিল। তখনো পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে।
বৃষ্টি হলেই দ্রুত পানি উঠে যায় উল্লেখ করে ব্যবসায়ী ইমরান বলেন, এর আগে যখন পানি উঠেছিল তখন ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছিল। এখন নাকি আবার ড্রেন ভরে গেছে। দিন শেষে ক্ষতি আমাদেরই।
চালের আড়তে পানি উঠে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভিজে যাওয়ার খবরে পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেকেই কম দামে চালসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে এসেছেন কৃষি মার্কেটে।
এমনই একজন নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সালমা আক্তার। তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। অল্প দামে পেয়েছি। বাসায় নিয়ে শুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।
এই নারী ১৬০০ টাকা দামের ২৫ কেজির দুই বস্তা কিনেছেন মাত্র ৫০০ টাকায়।
সালমার মতো অনেককেই অল্প দামে চাল, ডাল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে কৃষি মার্কেটে।
কৃষি মার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু জানান, গতকালের বৃষ্টিতে আমাদের আড়তের প্রতিটি দোকানে পানি ঢুকে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর আগেও কোরবানি ঈদের পর বৃষ্টিতে আড়ৎ তলিয়ে সব চাল ভিজে যায়। আমাদের চালের আড়তটি অন্য এলাকার তুলনায় নিচু হওয়ায় তাজমহল রোড, নতুন কাঁচাবাজার ও টিক্কা পাড়ার পানি মার্কেটে সহজেই ঢুকে যায়। গতকাল প্রবল বৃষ্টির দুই ঘণ্টা পর পানি নামে। এরমধ্যেই প্রতিটি দোকানে পানি প্রবেশ করে চাল ভিজে যায়।
তিনি বলেন, ভিজে যাওয়া চালের বস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এগুলোর তেমন দাম নেই। ক্ষতি পোষাতে ব্যবসায়ীরা কমমূল্যে চালের বস্তা বিক্রি করছেন। কার কত টাকা ক্ষয়ক্ষতি হলো সেটির পরিমাণ এখনো পুরোপুরিভাবে বলা যাচ্ছে না।
চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, রাস্তা উঁচু করে নির্মাণ করার ফলে আমাদের মার্কেটটি নিচু হয়ে যাওয়ায় পানি খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে। আমরা চাই মার্কেট উঁচু করে ব্যসায়ীদের রক্ষা করা হোক।