ম্যুরাল ভাঙা নিয়ে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, যা বললেন শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,নারায়ণগঞ্জঃ 

নারায়ণগঞ্জ শহরে জিয়া হলের ছাদে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলার ঘটনাকে ‘নিছক ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

তিনি বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল যদি ভাঙতে হয়, তাহলে বহু আগে ভাঙতে পারি রাতের আঁধারে ভাঙার কি দরকার আছে? জিয়াউর রহমান যখন জীবিত, ১৯৭৯ সালে তাকে আটকে রেখেছিলাম। মূলত তারা এসব করে নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে সেটা আপনাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। নারায়ণগঞ্জকে শান্ত থাকতে দেন, এমন কিছু করবেন না যাতে অশান্ত হয়।’

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।বিএনপি নেতাদের মন্তব্যের জবাবে নারায়ণগঞ্জ-৪আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলার ঘটনায় আমাকে বিএনপি নেতারা দায়ী করেছে। আমি এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাইনি। কারণ আমি তাদের ওই পর্যায়ের নেতা মনে করি না। তাদের কোনও কথার জবাব দেওয়ার মতো রুচি আমার নাই। তারা এমন নেতা তাদের মধ্যে একজন নিজ দলের সাবেক ছাত্রদল নেতার অবস্থান সম্পর্কে র‌্যাবকে জানিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে। আমি তাদের পাল্লায় পড়তে চাই না। গতকাল নাকি তারা আমার সম্পর্কে কিছু অশ্লীল কথা বলেছে। এটা কিছু হলে আমাকে দায়ী করে। কারণ এরাই তারা যারা ২০০১ সালে বোমা হামলা করে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’

জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল থাকার কথা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এখানে একটি মঞ্চ হবে। এখানে ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সকল ইতিহাস ধারণ করা হবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষরাও এখানে অবদান রেখেছেন। গতকাল দেখলাম, আমাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল তো এখানে থাকার-ই কথা না। পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তার কর্মকাণ্ডকে অবৈধ করা হয়েছে। যার শাসন অবৈধ, তার তো ম্যুরাল থাকার কথা না। তারা নাকি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই।’

জেলা প্রশাসনের একটি চিঠি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘চিঠিটি ২-৫-২০২৪ তারিখে ইস্যু করা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই পরিত্যক্ত হল ভেঙে ফেলা হবে। তবে ভেঙে ফেলার পরে এখানে কী হবে সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া রাজউক বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে এটি এক নম্বরে রয়েছে। ২ তারিখে সভা ডাকা হয়েছে, ৩ তারিখে এটা ভাঙলো। ৪ তারিখে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তাহলে আমরা এতদিন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলাম না কেন? এটা তো প্রশাসনই ভাঙবে, ভাঙতে বাধ্য। এখানে আমাদের প্রবলেম কী?’

ষড়যন্ত্রকারীরা ম্যুরাল ভেঙেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা অত্যন্ত সুকৌশলে কাজটি করেছে। কিংবা কাউকে দিয়ে করিয়েছে, কিংবা নিজে নিজে ভেঙে পড়েছে। তারা এটাকে নিয়ে ইস্যু করতে চেষ্টা করছে। যারা এই অপচেষ্টা চালাবেন তাদেরকে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা পারবেন না। এখানে নারায়ণগঞ্জের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি তুলে ধরা হবে। তাদের সবাই আওয়ামী লীগ করতেন না। এই যে নারায়ণগঞ্জকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র এটা কিন্তু ডান আর বাম নাই, এটা একটা গ্রুপ। এটা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

কথিত জিয়া হলের স্থানে ৬ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরে আমি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জে যে টাউন হল রয়েছে, এটা আমাদের স্বাধীনতার স্তম্ভ। ৬ দফা যদি স্বাধীনতার স্বপ্ন হয়, ৬ দফা যদি স্বাধীনতার স্তম্ভ হয়- এই ৬ দফা থেকে ১১ দফা এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে একটি স্বাধীন জাতি পেয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নারায়ণগঞ্জে ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেখানে আমার পিতা ভাষা সৈনিক এ কে এম সামসুজ্জোহা সভাপতিত্ব করেছিলেন। এটা যখন বিকৃত করা হচ্ছিল, আমার কাছে কষ্ট লাগে এই টাউন হল ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। কাগজে-কলমে সব ধরনের ডকুমেন্টে টাউন হল নাম রয়েছে, অন্যকোনও নাম নাই। এটা জেলা প্রশাসকের সম্পদ। ২০১৪ সালে আমাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে যখন আনিস সাহেব ছিলেন, ওই সময় সর্বসম্মতিক্রমে এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সরশের ভেতরেও যেমন ভূত থাকে ঠিক তেমনি প্রশাসনের ভেতরে অনেক ভূত থাকে।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘অতি আওয়ামী প্রশাসনের কারণে বিগত ১০ বছরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বিশেষ করে যখন নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে বিকৃত করে দেওয়া হচ্ছিল- ছয় দফা ঠিক যেখানে হয়েছে সেখানে টাউন হল করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে শিশু পার্ক করা হয়েছে। এটা খুব পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে যাতে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলা যায়। কিন্তু তারা তা পারেনি।’ এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালাম মিয়া, সাংবাদিক রবিন বিল্লাল, আহসান সাদিক শাওনসহ প্রমুখ।

জানা গেছে, বুধবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত জিয়া হলের সামনে জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়। পর দিন (বৃহস্পতিবার) বিকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। এছাড়া এই ঘটনার জন্য সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে দোষারোপ করেন।প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শামীম ওসমান জিয়া হল ভেঙে সেখানে ছয় দফা মঞ্চ করার প্রস্তাব রাখেন জাতীয় সংসদে। পরে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও এই হল ভেঙে নতুন করে ছয় দফা মঞ্চ, গ্যালারি, উন্মুক্ত স্থান নির্মাণ করার ঘোষণা দেন।