যমুনার ভাঙ্গনের হুমকিতে গ্রোয়েন, হার্ডপয়েন্ট, তীররক্ষা বাঁধ

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫

বগুড়া প্রতিনিধি:

 

 

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রশাসনের নির্ধারিত বোহাইল বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন না করে ইজারার শর্ত ও নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে যমুনার তীরবর্তী চন্দন বাইশা, আওলাকান্দিসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে গ্রোয়েন ও হার্ডপয়েন্ট হুমকির মুখে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি নদী পাড়ের লোকেরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন।

এভাবে যত্রতত্র বিভিন্ন পয়েন্টে ড্র্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার ভাঙ্গন রোধে নির্মিত গ্রোয়েন, হার্ডপয়েন্ট, স্পার ও তীর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। যত্রতত্র এবং অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন ও তা বাল্কহেড দিয়ে পরিবহনে যমুনার মৎস্য সম্পদ, জলজ প্রাণী ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর থেকে নাড়াপালা ও বোহাইল মৌজা বালু মহাল ঘোষণা করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। গত বছর আগস্ট মাসে বোহাইল মৌজার ১ নং খতিয়ানের ২ নং দাগের ৫০ একর জমি এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। জেলা যুবলীগ নেতা লিটন পোদ্দারের প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিমণি ট্রেড্রার্স ইজারা পায়। ইজারার শর্তে লাল পতাকা উড়িয়ে ওই জমি থেকে ৮৬ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও কয়েক গুন বেশি বালু উত্তোলন করা হয় বলে অভিযোগ।

যমুনার বুকে বালু মহাল ইজারা দেওয়ার পর থেকেই নদী ভাঙ্গন প্রবণতা বেড়ে গেছে। যমুনা পাড়ের ভুক্তভোগীরা বলছেন, বালু মহাল ইজারা দেওয়ার পর থেকেই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙ্গন আকার ধারণ করেছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে নদী ভাঙ্গনে কামালপুর, ইছামারা ফকিরপাড়া ও গোদাখালি গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়িঘর ও ৩ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। কামালপুর ও ধলিরকান্দি পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ হাজার মিটার নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধ ধসে গেছে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ধসে যাওয়া বাঁধ কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে।

ইছামারা, কামালপুর গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, ইজারাদার ব্যবসায়ীক স্বার্থে নদীর যে পয়েন্টে ভালো মানের বালু পাওয়া যায় কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সে পয়েন্ট থেকেই বালু উত্তোলন করে থাকে।

গ্রামবাসীরা বলেন, দিনের বেলা বালু মহালের সীমানার মধ্যে ড্রেজার থাকলেও রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেজার তীরবর্তী এলাকায় এনে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে যমুনা ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান-উল-আলম বলেন, গত বছর কামালপুর গ্রামে আমার বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী ইছামারা, ফকিরপাড়া ও গোদাখালী গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়িঘর যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে। আমরা সে সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ করেছি, নদীতীরে মানব বন্ধন করেছি। কিন্তু প্রতিকার পাইনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভে রিপোর্টে বলছে, নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে বোইল মৌজায় জেগে ওঠা চর ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তাছাড়া সেখানে অড়াই কোটি ঘনফুট ভিটি বালু ও বিট বালু মোজুত আছে। ঐ চরটি অপসারণ করা হলে নদীর প্রশস্ততা বাড়বে ফলে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন কমে যাবে। তাছাড়া নৌ চললাচলের পথও সুগম হবে।

জানা গেছে, বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন পোদ্দার গত আগস্ট মাসে বোহাইল বালু মহালটি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেন। ইজারা পাওয়ার পর থেকেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে যমুনার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ইজারা দেওয়া বালু মহাল থেকে উত্তোলন না করে যদি অন্য কোনো পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, তা হলে সেটা অবৈধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, তীরবর্তী গ্রাম ও আমাদের স্থাপনগুলো রক্ষার জন্যই সার্ভে রিপোর্টে চর অপসারণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তদারকি করার কোনো এখতিয়ার নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক আহসান হাবিব বলেন, পরিবেশগত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা ইত্তেফাককে বলেন, অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্ধারিত বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন না করে অন্য পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকলে ইজারা বাতিল করা হবে। এ ব্যাপারে ইজারাদার লিটন পোদ্দারের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।