যশোরের কেপিআই স্থাপনার ১০টিই আগুনের ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫

যশোর প্রতিনিধি:

 

রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যশোরের ১২টি কী পয়েন্ট ইন্স্টলেশন বা কেপিআই-এর প্রায় প্রতিটি স্থাপনাই আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জেলার কেপিআইভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টিকেই গত মাসে আগুনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে তা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা প্রদান করা হয়েছে।

এসব চিঠির অনুলিপি ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো ছাড়াও জেলা প্রশাসক এবং পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ‘কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় অগ্নি প্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ ও জননিরাপত্তা ব্যবস্থাদি বাস্তবায়নকরণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে চিঠি পাওয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে : ডিজাস্টার ডাটা রিকভারি সেন্টার টেকনোলজি পার্ক, যশোর ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র চাঁচড়া ও নওয়াপাড়া, মনিরামপুরের ডিজিপিএস বিকন স্টেশন, বাংলাদেশ বেতার নওয়াপাড়ার উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-৩, বিটিসিএল, যশোর বিমানবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর এবং পল্লী বিদ্যুত্ সমিতি-১ ও ২।

ফায়ার সার্ভিসের চিঠিতে ১০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাত থেকে ১১টি সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর হতে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ফায়ার সেফটি প্লান অনুমোদন নেই বলে তা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানেই নেই সাইনেস সিস্টেম। ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োজনীয় পরিমাণ নেই বা থাকলেও যথাযথভাবে রিফিল করা হয় না। ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানির রিজার্ভার থাকার কথা থাকলেও, তা নেই। বৈদ্যুতিক ফিটিংস পরীক্ষা ও লোড ক্যাপাসিটি টেস্ট করা, নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ কিংবা উদ্ধার সম্পর্কিত মহড়ার ক্ষেত্রেও অবহেলা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে বেশকিছু দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা হয়। ৬০ একরের বিশাল এলাকার অতি গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই এলাকার ৩২টি শেড ও চারটি ওপেন ইয়ার্ডে বিভিন্ন গার্মেন্টস কেমিক্যাল, এসিড, বিস্ফোরক, সুতা, কাপড়, ফলমূল, মাছ, বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ট্রাক টু ট্রাক বা ট্রাক টু শেডে লোড আনলোড করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ছয়টি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯৬০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর বাইরে ছোটখাট অগ্নিকাণ্ডেও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে চলেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য ১১টি সুপারিশমালা প্রদান করে তা তিন মাসের মধ্যে বস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, বেশকিছু ব্যবস্থা আমাদের আছে, যেগুলো নেই তার জন্য আমরা লিখেছি। আশা করছি, শিগিগরই আমরা এগুলো সমাধান করতে পারব।

ডিজাস্টার ডাটা রিকভারি সেন্টার টেকনোলজি পার্কের ১৫ ও ১২ তলা দুটি ভবন পরিদর্শনেও ফায়ার সার্ভিস বেশকিছু দুর্বলতা দেখতে পায়। এক্ষেত্রে বেজমেন্ট ফ্লোরে ফায়ার পাম্প অটো স্ট্যার্ট না হওয়াটা অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ফায়ার এলাম ও ডিটেকশন ব্যবস্থাও অকার্যকর। ফায়ার ডোর ব্যবহারের অনুপোযোগী। এখানকার বেসরকারি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা টেক সিটি বাংলাদেশ লিমিটেডকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিতে ৫ আগস্টের পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করছেন। ফলে ঐ কর্তৃপক্ষও দায়সারা ভূমিকায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসান কবীর বাবু বলেন, পার্কের এমটিবি মাল্টি টেনেন্ট বিল্ডিং-এ দেড় হাজার কর্মী কাজ করেন। তাই আগুনের ব্যাপারে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। বিটিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (টেলিকম) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, টেলিফোন একচেঞ্জে যে ধরনের নিরাপত্তা থাকার কথা সেটা নেই। আমরা এখনো আপডেটেড হতে পারিনি, ব্যাকডেটেড রয়েছি। অগ্নি মহড়ার ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং শিডিউল চেয়েছি।

যশোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক ও পরিদর্শন কমিটির সভাপতি দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, গত মাসে ১০টি কেপিআই স্থাপনা পরিদর্শন করে আমরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষ অতি সাধারণ অগ্নি মহড়া আয়োজনসহ অন্যান্য সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

কেপিআই স্থাপনায় আগুনের ঝুঁকির বিষয়টি অবহিত আছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনো প্রতিষ্ঠান/কারখানা/জনস্বার্থে ব্যবহূত স্থাপনা যেগুলো দেশের যুদ্ধ সামর্থ্য অথবা জাতীয় অর্থনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের যুদ্ধ কিংবা প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বা জাতীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন স্থাপনাকে বিভাগীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে কেপিআইভুক্ত করা হয়। কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩-এর ৪.৮ ধারায় বলা হয়েছে : কেপিআই চত্বরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিতকল্পে নিকটতম ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে ন্যূনতম বছরে দুই বার মহড়া করতে হবে।