
যশোর প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছায় পুত্রের ধারাল দায়ের আঘাতে পিতা শরিফুল ইসলাম (৫০) নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৮ মার্চ) ভোরে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শরিফুল ইসলাম পাতিবিলা গ্রামের আলী বকসের ছেলে।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, কি কারণে শরিফুলকে হত্যা করেছে নিহতের ছেলে রোমেন গ্রেপ্তার না পর্যন্ত জানা যাবে না।
নিহত শরিফুল ইসলামের ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, শরিফুল শনিবার ভোরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছেলে রোমেন (২১) ধারাল দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় শরিফুল ইসলাম ডাক চিৎকার করলে শরিফুলের স্ত্রী হাসিনা বেগমও চিৎকার করতে থাকে। তাদের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে রোমেন পালিয়ে যায়। পরে আহত শরিফুল ইসলামকে উদ্ধার করে চৌগাছা সরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রোমেনের স্ত্রী সাদিয়া জানিয়েছে, বাড়ির লোকজনের ডাক চিৎকারের শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার শশুর রক্ত মাখা শরীরে বারান্দায় পড়ে রয়েছে। রোমেন কখন ঘুম থেকে উঠে গিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে- তা আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।
নিহত শরিফুলের প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম জানান, শরিফুলের দুইজন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ছেলে রোমেন। প্রথম স্ত্রীর এক মেয়ে সন্তানও রয়েছে। পারিবারিক কোলহের কারণে প্রথম স্ত্রী শরিফুলকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। এর পরে শরিফুল হাসিনা বেগমকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ছোট স্ত্রীরও একটা মেয়ে সন্তান রয়েছে।
রোমেনের কয়েকজন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, রোমেন হাফেজি পড়েছে। হাফেজি শেষ করতে না পারলেও সে খুবই শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির ছেলে। ঘটনার আগের দিনও তারাবি নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে ফেরে। তারা জানায় রোমেনের প্রথম স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। দুইমাস আগে রোমেনের বর্তমান মা হাসিনা বেগমের বোনের মেয়ের সাথে রোমেনকে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরিফুলের এক ভায়ের বউ ও প্রতিবেশীরা জানান, শরিফুল ইসলাম দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল। যার কারণে নিজের মেয়েও নানাবাড়ি চলে গেছে এবং রোমনের প্রথম বউও চলে গেছে। এ ঘটনায় পারিবারিকভাবে বিচারও বসে। শরিফুল মাফ চেয়ে সেদিন পার পেয়ে যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিপি খাতুন বলেন, রোমেন একটা শান্ত ও ভদ্র ছেলে। গ্রামে নিহত শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির রটনা আছে। তবে হত্যা ঘটনায় রোমেনকে কেউ প্ররোচনা দিয়েছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখার দরকার।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বলেন, ঘটনা শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগম বাদি হয়ে রোমেনকে একমাত্র আসামি করে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
যশোরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি রোমেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, রোমেন গ্রেফতার হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।