যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে

ড. ফাহমিদা খাতুন বললেন

প্রকাশিত: ২:৫৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

 

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক ও ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের জোট এবং দ্বিপাক্ষীক চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে। রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কাটিয়ে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলো ডব্লিউটিও-এর নিয়োম-নীতির তোয়াক্কা করে। তাই সংস্থাটি এক্ষেত্রে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এরপর থেকেই নিজেদের মধ্যে সমমনা ১৫-২০ করে দেশ মিলে একাধিক জোট করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করছে। আরও আগে আমাদের এ পথে যাওয়া দরকার ছিল।

তিনি আরও বলে, বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে অমরা অনেক দিন ধরেই বেশকিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করা কথা বলে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যেখানে ৫০ দেশের সঙ্গে এফটি রয়েছে সেখানে আমাদের রয়েছে শুধুমাত্র ভুটানের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব আরও কিছু দেশের সঙ্গে এফটি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজার, পণ্য বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুদ্ধ আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে এলসি খোলা হলে তার জাহাজিকরণ যদি ৯০ দিনের পরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রপ্তানির বিপরীতে স্থগিত করা সুবিধা প্রযোজ্য হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। যদি এই স্থগিতাদেশের ৯০ দিন পর মার্কিন শুল্ক বিভাগ পণ্য খালাসিকরণের লক্ষ্যে শুল্ক অ্যাসেসমেন্ট করে তাহলে কত শতাংশ শুদ্ধ আরোপ করা হবে তা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাবে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১০ সুপারিশ
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ১০ দফা সুপারিশ করে। এগুলো হচ্ছে
১.শুধু মাত্র পোশাকখাত কেন্দ্রিক রপ্তানি নির্ভরতা না রেখে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা ও বৈচিত্রতা বাড়ানো এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা।
২. যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য কূটনীতি বজায় রেখে আমদানি বাড়িয়ে তুলা, সয়াবিন, মেশিনারি, ওষুধ ও সেবা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমালে তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে সরে আসতে পারে।
৪. উচ্চ শুল্ক হার আরোপের উদ্বেগ নিরসনে অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের নিয়ে অর্থনৈতিক কনসাল্টেশন গ্রুপ গঠন করা।
৫. ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে বা জাহাজীকরণ হলে রপ্তানীর বিপরীতে স্থগিতকৃত শুল্ক সুবিধা প্রযোজ্য হবে কিনা তা স্পষ্ট করা
৬. শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণে দ্বন্দ্ব নিরসন ও শিল্প সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা
৭. অনেক সময় রপ্তানিমূল্য সঠিক সময়ে দেশে আনা হয় না। রপ্তানিকারকদের সঠিক সময়ে রপ্তানি মূল্য দেশে আনতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ পাবে অন্যদিকে ঋণ খেলাপিও হ্রাস পাবে।
৮. পণ্য রপ্তানির ওপর ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রপ্তানিকারকদের ক্যাশ ইনসেনটিভের মতো নগদ প্রণোদনা না দিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ এ ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এতে প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং প্রকৃত রপ্তানিকারকরা প্রণোদনা পাবে। চীন এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে সফলতা পেয়েছে। ৯. আগামী নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তোলা এবং নির্বাচনী ইশতিহারে তা উল্লেখ করা।
১০. বিল অফ এন্ট্রি ইস্যুর ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এবং আমদানিতে ফরেন কারেন্সি রিলিজ করার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা।