যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সম্ভাব্য সর্বোত্তম নীতি কাঠামোর আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আমাদের ব্যবসা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ করার জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য নীতি কাঠামো এবং জোরালো সম্ভাবনার বিষয়ে আপনাদের আশ্বস্ত করবো।’
মঙ্গলবার (১০ মে) প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেলিগেশনের সঙ্গে বৈঠককালে এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের জানান, তিনি বিশ্বাস করেন মার্কিন কোম্পানিগুলো এ সুবিধা গ্রহণ করবে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আইসিটি, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল পণ্য, মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্য, অটোমোবাইল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, সিরামিকের মতো সম্ভাব্য খাতে আরও বিনিয়োগ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আপনারা অনুকূল পরিবেশ বুঝতে সক্ষম হবেন এবং আপনারা বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের আস্থা অনুভব করতে পারবেন।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এখন আরএমজি, চামড়া, প্লাস্টিক, পাট, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং আরও অনেক খাতে অত্যাধুনিক উৎপাদন কারখানার জন্য স্বীকৃত।
‘সময় এখন আমাদের’ দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের অনুকূল পরিবেশে বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ নেওয়ার সময় তৈরি করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইউএস-বাংলাদেশ এনার্জি টাস্কফোর্স যেটি সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে চালু হয়েছিল তা উভয় দেশের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
একইভাবে, প্রস্তাবিত ইউএস-বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমি টাস্কফোর্স টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় দেশের কোম্পানির সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে অবদান রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ-মার্কিন বন্ধুত্ব অভিন্ন মূল্যবোধ ও অংশীদারিত্বমূলক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদের সম্প্রসারিত সার্বিক ব্যবসায়িক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।’
‘মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধার মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করা যেতে পারে’, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।’
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে তার অন্যতম সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএস চেম্বারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন এই সফর এবং প্রাসঙ্গিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময়ের ফলে প্রত্যাশিত ব্যবসা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব আরও অন্বেষণ হবে এবং নিশ্চিতভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে এবং উভয় দেশের বেসরকারি খাত উপকৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে স্নাতক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সে কারণে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
বাংলাদেশকে এখন একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি দেশটি বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন উন্নত ও সহজ করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ সংসদের আইন এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত।’
শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সড়ক, রেলপথ ও নৌ যোগাযোগের উন্নয়ন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী-3
বাংলাদেশ সারা দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, ‘আপনারা যদি চান তবে আমরা শুধু মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি জোন নির্ধারণ করে দিতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ এবং দক্ষ জনশক্তির বিকাশে আমাদের ফোকাস নিশ্চিত করে এখানে বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার আমাদের নাগরিকদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির কৌশল অনুসরণ করছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিবিদ এবং সংস্থাগুলো দ্বারা টেকসই হিসেবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে আগত অতিথিরা সবাই নিশ্চিতভাবেই মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দেখবেন, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো আরও বেশি প্রত্যক্ষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদারদের অন্যতম এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এফডিআই এবং রফতানি বাজারের একক বৃহত্তম উৎস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে রফতানির পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বেড়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ বেড়ে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন হয়েছে।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড চেয়ার জে আর প্রাইর, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড সদস্য এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস এক্সিকিউটিভরা সভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডার এট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বৈঠক সঞ্চালনা করেন। খবর বাসস।