যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় চলছে হত্যাযজ্ঞ

প্রকাশিত: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত তিন দিনে দুইশরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। এর মধ্যে শুধু গতকাল প্রাণ হারিয়েছেন ৮৮ জন। নিহতদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতির আলোচনা ফের শুরু হয়েছে। এই আলোচনার মধ্যেই গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল গাজা সিটির বাসিন্দা আল-ঘৌলার বাড়িতে হামলা চালিয়ে একসঙ্গে ১৭ জনকে হত্যা করে দখলদাররা। আল-ঘৌলার প্রতিবেশী আহমেদ আয়ান রয়টার্সকে বলেছেন, যারা নিহত হয়েছেন, সবাই বেসামরিক ও নারী-শিশু। এখান থেকে কেউ ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়ছিল না। কেউ প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যও ছিল না।

উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, তারা ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একাধিক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, গত দু’দিনে তারা গাজায় ১০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে। যার সবই সশস্ত্র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হয়েছে। তবে ইসরায়েলিদের এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।

সৌদির সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদেদ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ছিল, সেগুলো দূর হয়েছে। পরবর্তী আলোচনা করতে আজ সোমবার কাতারের দোহায় যেতে পারেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নেয়া।

এদিকে গাজায় বর্বরতা ও যুদ্ধাপরাধ চালানো সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দখলদার ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছেন। বাইডেনের পক্ষ থেকে হাউস এবং সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গত শুক্রবার কংগ্রেসকে এ ব্যাপারে অবহিত করে। গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলকে অস্ত্র না দিতে অসংখ্যবার অনুরোধ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্র নতুন যেসব অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছে তার মধ্যে বোমাও আছে। যেগুলো ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে নিজ দেশের মানুষকে রক্ষায় হামাস একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন যুদ্ধবিরতি না হওয়ার জন্য হামাসকে দোষারোপ করেছেন। এ ছাড়া বিশ্বের সব দেশ কেন হামাসকে অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চাপ দেয় না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে ব্লিংকেন বলেন, কেন হামাসকে অস্ত্র ফেলে দিতে বিশ্বের সব দেশ সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বান জানায় না! হামাসের নেতাদের নিরাপদ প্রস্থান দিতে ইসরায়েল একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে চুপ ছিল। চলমান যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে দ্রুততম উপায় হলো জিম্মি চুক্তি। কিন্তু ইসরায়েলি সরকারের ওপর চুক্তি নিয়ে যখনই চাপ বাড়ে, তখন হামাস এ থেকে সরে যায়।

এদিকে হামাস লিরি আলবাগ নামে ১৯ বছর বয়সী এক নারী জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে এই জিম্মি ইসরায়েলি সরকারকে আহ্বান জানায়, দ্রুত যেন যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে তাদের মুক্ত করে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা ছিলেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্তবর্তী নাহাল ওজ ঘাঁটি থেকে তাকেসহ ছয় নারী সেনাকে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায় হামাস। এর মধ্যে পাঁচজন এখনও সশস্ত্র যোদ্ধাদের কাছে বন্দি আছে।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই সংঘাতের মধ্যে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শপথের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে ইসরায়েল। এর আঁচ কিছুটা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। দখলদার ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের শপথের পরপর তারা গাজায় মানবিক সহায়তা কমিয়ে দেবেন। তাঁর দাবি, যদি গাজায় ত্রাণ বেশি যায়, তাহলে সেখানে হামাসের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। কারণ, ত্রাণগুলো নিজেদের জিম্মায় নিয়ে সেগুলো হামাসই বিরতণ করছে। তবে ইসরায়েল এমনটি করলে গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।