ডেস্ক রিপোর্ট:
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে। এতে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে এক টার্ম পর আবারও হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন তিনি। যদিও ভোটের আগে নানা জরিপ বলছিল ভিন্ন কথা। প্রভাবশালী অনেক মিডিয়া এবং বিশেষজ্ঞরাও কমলার জয়ের ব্যাপারে আভাস দিয়েছিলেন। তবে কেন হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ট্রাম্পকে ঠেকাতে পারলেন না কমলা, তার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে কয়েকটি ভুলের কথা বলছেন তারা। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো— কমলার দেরিতে প্রার্থী হওয়া, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অভিবাসন। খবর এএফপির।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা
১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের কৌশল নির্ধারণকারী জেমস কারভিলে আগের সরকারের মেয়াদে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কথা বলেছিলেন।
ওই ঘটনার ৩০ বছর পর একই কারণে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিদায়ী প্রশাসন মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে না পারায় কমলা মার্কিন ভোটারদের ভোট জিততে পারেননি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্য–উপাত্তগুলোর ক্রমাগত উন্নতি হলেও বিভিন্ন জরিপে ভোটারদের হতাশা দেখা গেছে। ট্রাম্পও এর সুযোগ নিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী সমাবেশে অবিরত দ্রব্যমূল্য ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলে গেছেন।
অলাভজনক থিঙ্কট্যাংক অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বার্নার্ড ইয়ারস বলেন, জনগণ এখনো মূল্যস্ফীতিকে সমস্যা হিসেবে দেখেন। কারণ, তাঁরা অর্থনীতিবিদদের মতো কয়েক বছরের হার নিয়ে পর্যালোচনা করেন না, বরং তাঁরা দাম নিয়ে ভাবেন।
অভিবাসীদের ঢেউ
ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ড স্কুল অব ল-এর অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস মনে করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে অভিবাসন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাইডেন-কমলা প্রশাসনের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লাখ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার জন্য বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
কমলা হ্যারিসের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে একটি নির্দলীয় সীমান্ত বিল আটকে দিতে ট্রাম্প নির্বাচিত রিপাবলিকানদের প্রভাবিত করেছিলেন। আর রিপাবলিকানরা বলেছে, সীমান্ত বিলটি যথেষ্ট নয়। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা ট্রাম্প শিবিরের পাশে থেকেছেন।
জনসমর্থনে পরিবর্তন
প্রাথমিক বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, কমলা হ্যারিস প্রায় ৪০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ভোট এবং হিস্পানিক ও এশীয়দের প্রায় অর্ধেকের ভোট পেয়েছেন।
একই জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প কোনো অ–শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না জিততে পারলেও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে তাঁর সমর্থন একক অঙ্কে বেড়েছে। আর হিস্পানিকদের মধ্যে তাঁর সমর্থন বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। এই প্রবণতাটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য গভীর উদ্বেগের।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্তো সুরো বলেন, আমরা অবশ্যই মেক্সিকোর বংশোদ্ভূত মার্কিন পুরুষদের মধ্যে, ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে, কলেজে পড়াশোনা করেননি এমন মানুষদের মধ্যে, শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখেছি।
অধ্যাপক রবার্তো সুরো আরও বলেন, ভৌগোলিকভাবে সীমান্ত এলাকা ও নতুন অভিবাসনের ওপর খুব সরাসরি প্রভাব পড়ছে, এমন জায়গাগুলোতেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে।
সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি নারীদের সমর্থন বাড়তে দেখা গিয়েছিল। যদিও তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
নির্বাচনী প্রচারে দেরি
খুব শিগগির বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮২ বছর হতে যাচ্ছে। শুরুতে বাইডেনই ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর বয়স বেশি হওয়ায় ডেমোক্র্যাট নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তাঁর কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়া হয়নি। তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই হোয়াইট হাউস তা অস্বীকার করত।
জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ব্যাপকভাবে ধরাশায়ী হওয়ার পর সংকট দেখা দেয়। তাঁর মানসিক অবস্থা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দলীয়ভাবে প্রচণ্ড চাপের মুখে বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পান। কিন্তু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে তাঁর হাতে ছিল মাত্র তিন মাস সময়। নির্বাচনে কমলার হেরে যাওয়ার পেছনে এটাকেও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।