রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম। পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করতে ওই পুলিশ সুপারকে আইনের আওতায় নেওয়া এখন সময়ের দাবি। না হলে পরিণতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক।
গতকাল বুধবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
ওই পুলিশ সুপারের একাধিক ছবিসহ দেওয়া পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর রংপুর হয়ে ওঠে সারাদেশের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। সেদিন থেকে রংপুরে শুরু হয় ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন। যার ধারাবাহিকতা ১৭, ১৮, ১৯ জুলাই, ১, ২, ৩, ৪ আগস্ট। যখন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মনিরুজ্জামান গং ছাত্রদের সামনে ভয়ংকর রুপে আবির্ভূত হয়, তাণ্ডব চালায় পুরো রংপুর জুড়ে। চালায় ঢালাও গ্রেপ্তার বাণিজ্য।
তিনি আরো লিখেছেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কিছু ভালো অফিসার দাড়ায় ছাত্র-জনতার পক্ষে। যখন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ভেতরে ভিতরে ছাত্রদের পক্ষে বিপক্ষে দুই ভাগ হয়ে যায়, তখন ১৯ জুলাই মাঠে নামে রংপুর জেলা পুলিশ। সেদিন মূলত রংপুর সিটি বাজার এলাকা ছিল আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের সাথে রংপুর জেলা পুলিশের পোশাক পরিহিত সদস্যদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এক সময় নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে সাঁজোয়া এপিসি যানে করে সিটি বাজারের সামনে সিটি কর্পোরেশনের পাশে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করে তৎকালীন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। সেদিন রংপুরে ৪ জন শহিদ হন অন দা স্পটে, গুলিবিদ্ধ হন প্রায় দুই শতাধিক। এই দিনে মেট্রোপলিটন পুলিশের পোশাক পরিহিত কাউকে দেখা না গেলেও তাদের একটি সাঁজোয়া যান রাস্তায় ছিলো।
সারজিস আলমের অভিযোগ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন অভ্যুত্থানের হত্যা মামলার আসামি এই সাবেক পুলিশ সুপার। আমার ভাইদের হত্যাকারীরা কি এভাবেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? তাদের কি শাস্তি হবে না? হাসিনার পতনের পর এই তথাকথিত পুলিশ গুলোকে আইনের আওতায় না এনে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে যুক্ত করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।
এর আগে ওই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। সেই পোস্টের শেষাংশে দাবি করা হয়েছে-খুবই সাম্প্রতিক সময়ে ১ কোটি চল্লিশ লাখ চার হাজার ৯৫৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান এবং বর্তমান সিভিল সার্জনের আমলনামা সামনে আসছে বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ দিন পর ২০ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। ওই পোস্টে কাদের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়েছিল তা তুলে ধরেছিলেন তৎকালীন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মজনু।
সেই স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়ু গত ১৯ জুলাই রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) নিজেই ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়েন।
স্ট্যাটাসে আরও লেখা হয়- ঈশ্বর ক্ষমতাশালী। এসপি-ডিআইজি-জেলা প্রশাসক-বিভাগীয় কমিশনার এরাও প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী হওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি করেও মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। আর আমরা ঘটনার দিন ডিউটিতে না থেকেও মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছি।
এই ফেসবুক পোস্ট রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলেও শেয়ার করেন এসআই মজনু। এরপর থেকে পোস্টটি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় রংপুরজুড়ে।
ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে ওই সময় এসআই মজনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, আমি আমার বক্তব্য নিজের ফেসবুক আইডিতে দিয়েছি। শত শত ফুটেজ আছে আমার কাছে। গত ১৯ জুলাই সিটি বাজার এলাকায় ছিল জেলা পুলিশের পোশাকধারীরা। অথচ তাদের নামে মামলা হচ্ছে না। সেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের কেউ ছিল না। (বাসস)