রপ্তানির তথ্যে গড়মিলে জিডিপি কমবে না: অর্থ মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ১:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২৪

সেলিনা আক্তার:

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যে চেয়ে প্রকৃত রপ্তানি বেশ কম বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রভাবে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাশাপাশি মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু জিডিপিসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতেই এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, রপ্তানির বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রকৃতপক্ষে দেশে আসে, তার ভিত্তিতেই জিডিপির হিসাব করা হয়। তাই এর প্রভাবে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় কমবে না।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে রপ্তানি তথ্যের গরমিল নিয়ে সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বর্তমানে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ফলে আশা করা যায়, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, রপ্তানির বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রকৃতপক্ষে দেশে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধুমাত্র সেই পরিমাণ অর্থ দেশের রপ্তানির পরিমাণ হিসেবে প্রকাশ করে থাকে। জিডিপির হিসাব করার সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংকের এ হিসাবকেই বিবেচনায় নেয়। ফলে সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় রপ্তানি কমে যাওয়া এবং এর ফলে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় কমে যাবার যে আশংকা করা হয়েছে তা সঠিক নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের কিছু ক্ষেত্রে উপাত্তের পুনর্বিন্যাস হয়েছে। তবে এর ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সার্বিক ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ইতোমধ্যে সবার অবগতির জন্য পুনর্বিন্যস্ত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রদত্ত নগদ আর্থিক প্রণোদনার পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত প্রকৃত রপ্তানি আয় প্রাপ্তি এবং থার্ড পার্টি অডিটরের মাধ্যমে প্রকৃত ক্যাশ ইনসেন্টিভ নিরুপণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সুতরাং, সরকার কর্তৃক রপ্তানির বিপরীতে যে নগদ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে, তা সঠিক রয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এদিকে এনবিআরের তথ্যের ভিত্তিতে দেশের রপ্তানি নিয়ে নিয়মিতভাবে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি। এছাড়া রপ্তানির বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে, সে তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত দশ অর্থবছরে এ দুই সংস্থার রপ্তানি আয় পরিসংখ্যানের পার্থক্য ক্রমেই বাড়তে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বৃহস্পতিবারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে গত মে পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। যদিও ইপিবি গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরাত দিয়ে প্রকাশ করা তথ্যে দাবি করে, ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ এ দুই সংস্থার তথ্যে রপ্তানি আয়ে গরমিল দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি ডলার। শুধু গত অর্থবছরেই নয় বরং গত ১০ বছরে দুই সংস্থার তথ্যে গড়মিল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

এর আগে পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি ৩ জুলাই সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলেছে, এত দিন ইপিবির পরিসংখ্যান ধরে রপ্তানির হিসাব করা হতো। তবে সে অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

গরমিল সংশোধনের পর রপ্তানি আয় কমলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার কমতে পারে। মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু জিডিপিসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতেই এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যেসব হিসাব করা হয়েছে, তা সব ক্ষেত্রেই পর্যালোচনা করা উচিত বলে জানিয়ে আসছিল অর্থনীতিবিদরা।