ইসলামী ডেস্ক রিপোর্টঃ
রমজান আসার আগেই মহানবী (সা.) রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজান এলে অন্য কাজ কমিয়ে রমজানকেন্দ্রিক ইবাদত-আমলে মগ্ন হতেন। মাহে রমজানে রাতের বেলা নবীজি (সা.) যে আমলগুলো করতেন, তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত- রমজানে নবী (সা.) বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান এলে প্রতি রাতে নবীজি (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) আসতেন। তাঁরা একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (বুখারি: ৩৫৫৪)
রোজা ফরজ হওয়ার বছরে রাসুল (সা.) প্রথম দিন মসজিদে গিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়েছিলেন। সাহাবিরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেই নামাজে। পরদিন যথানিয়মে পড়েছিলেন। প্রথম দিনের তুলনায় অধিক সাহাবি উপস্থিত হয়েছিলেন। এভাবে তিন দিন চলল। পরে রাসুল (সা.) আর এলেন না। সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে বললেন, আমার ভয় হয়, আল্লাহ যদি এ নামাজ ওয়াজিব করে দেন, তাহলে আমার উম্মতের কষ্ট হয়ে যাবে। পরে আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.) আনুষ্ঠানিকভাবে তারাবির নামাজ পড়তে শুরু করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমজানে ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার আগের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২০০৮)
তাহাজ্জুদ- রাসুল (সা.) সব সময় তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজে আরও বেশি মগ্ন হয়ে যেতেন। রমজানে কখনও তাঁর তাহাজ্জুদ নামাজ ছুটতো না। রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদের জন্য তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজান মাসেও অন্য সব মাসের রাতে ১১ রাকাতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এ চার রাকাত আদায়ের সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাকাত আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি বিতর নামাজ আদায়ের আগে ঘুমিয়ে পড়েন? নবী (সা.) বললেন, আমার চোখ ঘুমায়, আমার অন্তর ঘুমায় না।’ (বুখারি: ৩৫৬৯)
সেহরি- রাসুল (সা.) প্রতি রোজার জন্য সেহরি খেতেন। সেহরি গ্রহণ করা নবীজির সুন্নত। তিনি সাহাবিদের সেহরি খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। সুবহে সাদিকের আগেই সেহরি খেতেন। সেহরি খাওয়ার পর ফজরের আজান হওয়ার সময় বেশিক্ষণ বাকি থাকতো না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি: ১৯২৩)
অন্য হাদিসে আছে, সাহাবি জায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খাই, এরপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফজরের আজান ও সেহরির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, ৫০ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ।’ (বুখারি: ১৯২১) ৫০ আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত, যা পাঠে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।
ইফতার- ইফতার গ্রহণ করা ইবাদত এবং এটি স্বতন্ত্র সুন্নত। রমজানজুড়ে নবীজির আমল ছিল যথাসময়ে ইফতার করা। যথাসময়ে ইফতারের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। নবীজি সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতেন। ইফতার শেষ করে সাহাবিদের নিয়ে নামাজের জামাতে দাঁড়াতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘লোকেরা যত দিন যথাসময়ে ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি: ১৯৫৭)