রমজান ঘিরে রাজধানীর ১০০ পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে ডিম-মুরগি বেচবে বিপিএ

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫


নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

ডিমের বাজার অস্থিতিশীল ছিল সদ্য বিদায় হওয়া বছরের বেশিরভাগ সময়েই। দাম বেঁধে দেয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। ডজন প্রতি ডিমের দাম উঠে গিয়েছিল ১৮০ টাকায়।

তবে নতুন বছরের শুরুতেই আবারও ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও।

এমন পরিস্থিতিতে রমজানকে সামনে রেখে ঢাকার ১০০টি পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে ডিম, মুরগি ও কৃষিজাত পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরিউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘আসন্ন রমজান উপলক্ষে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

এছাড়া বিপিএর সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে দক্ষ ব্যক্তি ও উদ্যোক্তা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কিছু সংখ্যক স্মার্ট ছাত্র যারা কৃষি খাত এবং ভোক্তা-উৎপাদকের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

তাদের দক্ষতা এবং উদ্যমের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি আরও কার্যকরী হবে, যা দেশের কৃষি খাতের উন্নতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।’

অভিযোগ করে বিপিএ সভাপতি বলেন, ‘বছরে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। তাদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় কমছে না ডিম-মুরগির দাম। ভাঙ্গা যাচ্ছে না সিন্ডিকেট।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও দেশের বাজারে না কমায় মুরগির দামে প্রভাব পড়ছে। সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে প্রান্তিক খামারিদের রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

খামারিদের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চার সরবরাহ নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন সুমন হাওলাদার।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের হাত থেকে প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।


আরও পড়ুন  

১৯ ভাইরাসের মধ্যে ১১টির প্রকোপ রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ রোগের ৩০টি প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এদের মধ্যে ১১টি ভাইরাসের প্রকোপ ছিল শুধু রাজধানীতেই। এ ছাড়া রাজশাহীতে দুটি ভাইরাসের প্রকোপ বেশি ছিল। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও খুলনার বেশ কিছু এলাকায় ঘুরেফিরে কয়েকটি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রোগের প্রাদুর্ভাব-সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত মৌসুমী রোগ বা ভাইরাসের হঠাৎ বৃদ্ধিকে প্রাদুর্ভাব বলা হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু বছরজুড়ে থাকায় এ ভাইরাসকে প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গণনা করা হয়নি। এদিকে ২০২৫ সালে করোনার মতো নতুন একটি ভাইরাস বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যদিও দেশে এখনও দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়নি। তবুও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ, ভেজাল খাদ্য, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় ঢাকাতে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের মতো বাংলাদেশও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপর। শুধু ভাইরাস নয়, কয়েক বছর ধরে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে ঢাকাতে। তবে করোনা মহামারির মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া, হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ায় রোগের প্রাদুর্ভাব কম ছিল। নতুন করে আগের ভাইরাসগুলো আবার ফিরছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, ঢাকায় ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হওয়ার বড় কারণ জনসংখ্যা বেশি। দেশ বিদেশ থেকে কাজের প্রয়োজনে মানুষ ঢাকায় আসে। অনেক ভাইরাস আছে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনযাত্রা মান বদলে যাওয়া, ভেজাল খাদ্য, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ, এডিস মশা বেশি থাকায় অন্য রোগের প্রকোপও ঢাকায় বেশি। তিনি আরও বলেন, এসব ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকার বাইরে থাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। বস্তি ও ভাসমান লোকদের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কম। পরবর্তী সময়ে এই ভাইরাসগুলো যাতে আর না ছড়ায়, সে জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বায়ুদূষণে কারও কারও অনেক রোগ দেখা দেয়। তাই বায়ুকে দূষণমুক্ত করতে হবে। এডিস মশার নিধন সম্ভব হলে জিকা-চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আইইডিসিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরজুড়ে সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ছিল তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) ভাইরাসের। গত ১২ মাসে এর প্রকোপ দেখা দেয় আটবার। এই ভাইরাস প্রাণী থেকে ছড়ায়। দেশের ১৬টি জেলায় তড়কার রোগী বেশি মেলে। এই রোগে আক্রান্তের ৯৫ শতাংশ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ছিল ডায়রিয়ার। গত এক বছরে এ রোগের দাপট চারবার দেখা যায়। প্রায় ১১ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে ফিরেছে জিকা-চিকুনগুনিয়া। দেশে ২০১৪ সালে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ১০ বছর পর আবার এ ভাইরাস আবার ফিরেছে। জিকার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। সর্বশেষ ২০২১ সালে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রকোপ ছিল বেশি। গত বছর এই ভাইরাস ফের সক্রিয় হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আরও ছিল টাইফয়েড জ্বর, চিকেন পক্স, মেনিনজাইটিস, চোখের ভাইরাস, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া, নবজাতক শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক, লেপ্টোস্পাইরোসিস ও ইবোলা। এদিকে ২০২১ সালে ডায়রিয়া, করোনা, খাদ্যে বিষক্রিয়া ও মস্তিষ্কের প্রদাহ বেশি দেখা যায়। পরের বছর ১২টি রোগের ২৪ বার প্রাদুর্ভাব ঘটে। ২০২৩ সালে ১৪টি রোগের ২৬টি প্রকোপ দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঘুমিয়ে যাওয়া জীবাণুকে জাগিয়ে দিচ্ছে। সারা বছরই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, জিকা, নিপাহ ভাইরাস দেখা দিচ্ছে। মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাদ্যে ভেজালের কারণেও এটি দেখা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পুষ্টিহীনতাসহ তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতায় ২০৩০ সালের পর থেকে বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুসারে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বাড়ায় মানুষের স্বাস্থ্যে নানাভাবে প্রভাব পড়ছে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকাসহ মশাবাহিত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস নতুন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়াচ্ছে। নতুন ধরন মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ঢোকার নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেসব স্থানে পরীক্ষা জোরদার করার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ এলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া আইইডিসিআরের নমুনা পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সেসব নমুনা থেকে নিয়মিতভাবে জিন বিশ্লেষণ করা হয়। আশা করি, নতুন ভাইরাস এলে আমরা দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করতে পারব। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, প্রতি বছরই রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে আমরা জরিপ করে থাকি। জরিপে যে পরিস্থিতি উঠে আসে, এটি আমলে নিয়ে প্রতিরোধে মহাপরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সমস্যাগুলোকে জরুরি বিষয় হিসেবে না দেখলে আগামীতে অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।