রাজধানীতে ঢিলেঢালা হরতালে রাস্তায় যানজট, যাত্রী সংকটে ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারাদেশে চলছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি। তবে চলমান এ হরতাল কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়েনি রাজধানীতে। অনেকটাই ঢিলেঢালা হরতালের কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম গুলিস্তান-পল্টন, নিউমার্কেট-ফার্মগেটসহ নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনে আটকা পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবি সাধারণ মানুষ। অপরদিকে নগরীর ৩টি বাস টার্মিনালের মধ্যে গাবতলী ও মহাখালীতে যাত্রী সংকটের কারণে ছাড়েনি কোনো দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী বেশকিছু দুরপাল্লার বাস যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গন্তব্যে উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। নিত্যদিনের কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক। মানুষ কর্মস্থলেও যাতায়াত করেছে স্বাচ্ছন্দে। যদিও বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহন তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর, গাবতলী ঘুরে দেখা গেছে, গাড়ির চাপ কম, তবে স্বাভাবিক দিনের মতোই মানুষজন ঘর থেকে বের হয়েছে।
হরতাল থাকলেও সকালে অফিসগামী যাত্রীদের নির্বিঘেœ এবং স্বাভাবিকভাবেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে সন্ধ্যায় অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষও বিভিন্ন গণপরিবহনে গাদাগাদি করে নির্বিঘেœ যার যার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা গেছে। রাস্তায় বাস ও প্রাইভেটকারের চলাচল কম থাকলেও রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দখলে রয়েছে ঢাকার সড়কগুলো। এছাড়া অধিকাংশ দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
স্বাভাবিক কর্মদিবসগুলোতে অফিস শুরুর সময়ে সড়কে প্রচুর যানবাহনের চাপ থাকে। গণপরিবহনগুলো থাকে যাত্রীতে ঠাসা। কিন্তু হরতালের কারণে সড়কে যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও রাজধানীর ব্যস্ততম গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট ও নিউমার্কেট এলাকায় তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর অন্যান্য সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ বাসে যাত্রীর ভিড় থাকলেও অনেকটা স্বস্তিতেই গন্তব্যে যেতে পেরেছেন অফিসগামী-ঘরমুখো যাত্রীরা।
এদিকে মিরপুর-১৩ ও ১১ নম্বর সেকশনের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবার খুলেছে। শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। ফলে হরতালের মধ্যেই মিরপুরের এই পোশাক শিল্প এলাকা আবার কর্মচঞ্চলতায় মুখর।
তবে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ দিন এ দুটি বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কোচগুলো সব টার্মিনাল, তেলের পাম্প ও আশপাশে পার্কিং করা।
অধিকাংশ টিকিট কাউন্টারগুলোয় কোনো মানুষ নেই। কোনো যাত্রীরও দেখা পাওয়া যায়নি। হরতালে টার্মিনালকেন্দ্রিক কোনো দোকান খোলেনি। অন্য কর্মদিবসে এ সব দোকানে পরিবহন শ্রমিক, যাত্রী, হকারে সরব থাকে।
এ দুটি টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিক ও টিকিট কাউন্টারের ম্যনেজাররা জানান, যাত্রী সংকটের কারণে তারা দুরপল্লার কোনো বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ছেন না। হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ফাতেমা, রোজিনা ও রয়েলসের কাউন্টারে দেখা গেছে কোনো যাত্রী নেই। তবে কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে।
এসব পরিবহনগুলো থেকে অন্য দিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে গড়ে ৮টি গাড়ি ছেড়ে যায়। আজ কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। যাত্রী এলে দুয়েকটি গাড়ি ছেড়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।
এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী বেশকিছু দুরপাল্লার বাস সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-মাওয়া রুটে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এ রুটের পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা বলছেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপেজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার কারণেই তারা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
জানা গেছে, আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের এই হরতাল চলবে আগামী মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। এরপর পাঁচ দফায় ১১ দিন পর্যায়ক্রমে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যা শেষ হয় গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৬টায়।