রাতে ঝগড়া, ভোরে প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৪

চাঁদপুর প্রতিনিধি :

শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে রাতে গৃহবধূ আসমা আক্তার তানজিনার (২১) ঝগড়া হয়। এরপর ভোররাতে আমগাছের সঙ্গে তানজিনা ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এমনটাই দাবি করছেন মৃতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

রোববার (৩ নভেম্বর) ভোররাতে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চির্কা এলাকার এক বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আসমার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। মৃত তানজিনার স্বামী প্রবাসে থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে আসমার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী এলাকার চর মথরা গ্রামের হানিফ খানের বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী মাছুমের সঙ্গে। বিয়ের পর ঠিকঠাক মতোই চলছিল তাদের সংসার। আসমা ও মাছুম দম্পতির কোলজুড়ে ছেলে আয়ানের জন্ম হয়। এরপর থেকে তাদের সংসারে নানা বিষয় নিয়ে কলহ শুরু হয়। গত রাতে আসমার সঙ্গে তার শাশুড়ি ও পরিবারের লোকজনের ঝগড়া হয় বলে জানা যায়।

আসমার শাশুড়ি মাছুমা বেগম বলেন, আমার পুত্রবধূ রাতে আমার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল। ভোর রাতে আমার স্বামী হানিফ খান বাথরুমে যাওয়ার সময় দেখেন ঘরের কোণে থাকা আম গাছের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে পুত্রবধূ ঝুলে আছে। উনার ডাক শুনে আমি এবং আমার ছেলে সাইমুন ঘরে থেকে বের হয়ে তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

\আসমার দেবর সাইমুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি কারণে ভাবী আত্মহত্যা করেছে তা আমার জানা নেই। আমি পাশেই আরেক ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। বাবার ডাক শুনে উঠে দেখি এই অবস্থা।

আসমার ভাবী রিয়া বলেন, গত রাত ১২টার সময় আমার সঙ্গে ইমোতে কথা হয়। এ সময় আসমা খুব কান্নাকাটি করছিল। কি জন্য কান্নাকাটি করিস জানতে চাইলে বলে, ভাবী আমার কাছে খারাপ লাগছে এই বলে ফোন রেখে দেয়। আমি পরে দেখি রাত ১টার দিকে আসমা আমাকে ফোন দিয়েছিল, আমি ঘুমিয়ে থাকার কারণে কলটা রিসিভ করতে পারিনি। রাত ৪টার সময় আমার দেবর ফোন দিয়ে জানায় আসমা নাকি আত্মহত্যা করেছে। এটা আসমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নাটক। তারা আসমাকে মেরে ফেলে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

আসমার খালা মরিয়ম বলেন, গতরাতে ১২টা ৩১ মিনিটে আমার ইমোতে আসমা ফোন করে। তখন তাদের ঘরে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। এর মধ্যে তার কাছ থেকে কেউ মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফোন কেটে দেয়।

আসমার ভাই রুবেল খান বলেন, আসমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। আমার বোন আত্মহত্যার করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসলাম হোসেন বলেন, আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মরদেহ ঘরে চাদর দিয়ে ডাকা। আসমার শ্বশুর হানিফ খানসহ পরিবারের লোকজন জানান, আসমা ঘরের পাশে আম গাছের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আম গাছ থেকে আমি ওড়না ও আসমাকে উদ্ধার করিনি।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হানিফ সরকার বলেন, আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।