‘রামদা’ নিয়ে ভোট চাইতে বললেন আ.লীগ নেতা, ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: ৭:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

দলীয় নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ও রামদা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম ওরফে সঞ্জু।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাতে গন্ডা বাজারে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক বর্ধিত সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
সাজিদুল ইসলাম গন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের সমর্থক।

রামদা-মোটরসাইকেল নিয়ে নেতাকর্মীদের বের হওয়ার নির্দেশ-সংক্রান্ত বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে একটি ছুরি দেখিয়ে কীভাবে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে হবে, তা বলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, গন্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম। এসময় নিজের কোমর থেকে ছোট একটি ছুরি বের করে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন। ভিডিওতে সাজিদুলকে বলতে শোনা যায়, ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়া আপনারা, মোটরসাইকেল পারেন আর যা-ই পারেন, তাই নিয়ে আইবেন। উদাহরণ হিসেবে (কোমরের ছুরি দেখিয়ে) আজকে কিন্তু আমিও গেছি, খালি হাতে যাইনি। অন্যরা গেছে রামদা-টামদা লইয়া, আমিও একটা লইছি সভাপতি হিসেবে। নিজের প্রয়োজন যখন পড়বো তখনতো ছাড়ন যাইতো (যাবে) না; ছাড়ন যাইবো? এ কারণে আমিও একটা লইছি।’

সাজিদুল আরও বলেন, ‘কালকে থাইক্কা সকাল ৯টার সময়, ওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি যারা আছেন, দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে একজন সভাপতি, একজন সেক্রেটারি দুইজন দুইটা গাড়ি (মোটরসাইকেল) নেবেন। একটা গাড়ির মধ্যে একজন করে লোক থাকবো (থাকবে), একটা করে রামদা থাকবো। এটা হইলো আপনাদের জন্য বাধ্যকতা, আনতে হবে। আইসা বলবেন, আমারতো গাড়ি নেই। দরকার হলে গাড়ি একটা ভাড়া নিবেন। যাদের গাড়ি নাই, গাড়ি আপনি ভাড়া নিবেন, নাইলে কিনবেন, নাইলে পয়দা করবেন। আপনাদের ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা বলতেছি, গাড়ি লইবেন, সাথে একজন লোক নেবেন, হেলমেট পরবেন, রামদা লইবেন…লইয়া আপনারা মুভ করবেন।’

নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেকে আছেন বয়স্ক। তারপরও আমি বলবো যদি পারেন, আসবেন। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্য যারা আছেন, দয়া করে আপনারা কেউ খালি হাতে আসবেন না। প্রত্যেককে একটা গাড়িতে একজন লোক নিয়া কালকে সকালে আসবেন। আর যুবলীগ যারা আছেন, ম্যাক্সিমাম লোকের গাড়ি আছে, ছাত্রলীগেরও গাড়ি আছে। তোমরা হেলমেট পইরা, মাথা বাইন্দা যা নেওয়ার, তা-ই নিবা। অর্থাৎ আগামীকাল থাইক্কা আমি যেহেতু কোমরে এইটা বানছি (কোমরের ছুরি দেখিয়ে), দরকার হলে আরও একটা বড় লইয়াম (নেবো)। আগামী নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, ইলেকশনের দিন আল্লাহ বাঁচাইলে বিজয় মিছিল করে আমরা ফিরবাম (ফিরবো)। এইটা হলো আমাদের গন্ডা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আদেশ এবং নির্দেশ।’
এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই হাততালি দেন। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন মহলের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সভায় উপস্থিত এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সঞ্জু ভাইয়ের প্রকাশ্যে এসব কথা বলা ঠিক হয়নি। এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমাদের প্রতিপক্ষের লোকেরা তার বক্তৃতার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে সাজিদুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। একপর্যায়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন।
প্রচারণার বিষয়ে নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিলের ফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা এভাবেই ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন। এতে তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভয়ে আছেন। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে ভিডিওটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাছাড়া আমাদের ইলেকটোরাল এনকোয়ারি কমিটির সদস্যরাও বিষয়টি দেখছেন।’
পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, যেহেতু তিনি প্রকাশ্যে ছুরি দেখিয়ে অন্যদের মোটরসাইকেলে রামদা নিয়ে বের হয়ে ভয়ভীতি দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু এটি স্পষ্ট আচরণবিধির লঙ্ঘন। এটি আইনগতভাবে অপরাধের শামিল। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।