আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
গেলো কয়েকদিনে তুষার গলে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে উরাল নদীর পানি। এতে একটি বাঁধ ভেঙে রাশিয়ার ৩৯টি অঞ্চলের ১০ হাজার ৪০০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। সোমবার রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়।রাশিয়ায় কাজাখস্তান সীমান্তের কাছে ওরেনবার্গ অঞ্চলে নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হয়েছে। ওরেনবার্গের উরাল নদীর পানির স্তর আগামী তিনদিনে বিপজ্জনক সীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া সংস্থা।
সম্প্রতি তুষার গলে ইউরোপের কয়েকটি বৃহত্তম নদী উপচে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম উরাল নদী। নদীটি উরাল পর্বতমালা থেকে কাস্পিয়ান সাগরে প্রবাহিত হয়। রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তুষার গলে যাওয়ার কারণে শুক্রবার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই নদীর পানি কয়েক মিটার পর্যন্ত বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বানের স্রোতে মস্কো থেকে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার (১,১০০ মাইল) পূর্বে ওরস্ক শহরে একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। সাইবেরিয়া, ভলগা এবং রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলেও বন্যার খবর পাওয়া গেছে।
মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সক্রিয়ভাবে তুষার গলে যাওয়া এবং জমে যাওয়া নদীর মুখ খুলে যাওয়ার সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা মঙ্গলবার বন্যা চরম সীমায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি ২০ এপ্রিলের পর নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
রাশিয়ার উরাল পার্বত্য এলাকা এবং সাইবেরিয়ার কয়েকটি এলাকা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। পাশাপাশি বন্যার কারণে কাজাখস্তানেরও ১০ টি উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। কাজাখস্তানের জরুরি মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, তারা আপাতত ১২ হাজার মানুষকে অস্থায়ী শিবিরে রেখেছে। ওদিকে, রাশিয়া কর্তৃপক্ষ শনিবারেই ওরেনবার্গ অঞ্চলের ওরস্ক নগরীর আশপাশ থেকে ৪ হাজার ৫০০ জনকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায়। ভিডিও ফুটেজে মানুষজনকে গলা সমান পানিতে হাটাচলা করতে দেখা গেছে।
ক্রেমলিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কিছু জায়গায় পানির মাত্রা গত ১০০ বছরের যে কোনও সময়ের তুলনায় এখন অনেক দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে রাজধানী মস্কো থেকে ১৮০০ কিলোমিটার ওরস্ক নগরীর একটি তেল শোধনাগার বন্যার কারণে অচল হয়ে পড়েছে। ক্রেমলিন রোববার বলেছে, উরালের কুরগান এবং সাইবেরিয়ার তাইয়ুমেন অঞ্চলেও বন্যা এখন অবশ্যম্ভাবী। ওই দুই এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুতই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নগরীতে খুব শিগগিরই বন্যার পানি ঢুকে পড়বে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ওরেনবার্গ অঞ্চলের গভর্নর ডেনিস পাসলার বলেন, বন্যার রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে অঞ্চলটিতে এত ভয়াবহ বন্যা আগে আর কখনও দেখা যায়নি। রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা মন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার কুরেঙ্কোভ রোববার ওরস্ক নগরী পরিদর্শনকালে সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। শুক্রবার একটি বাঁধ ভেঙে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ওদিকে, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, ব্যাপকতার মাত্রা এবং প্রভাবের দিক থেকে এই বন্যা দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।