রাষ্ট্রপতি অপসারণে রাজি নয় বিএনপি, ছাত্র নেতৃত্ব অনড়
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাংবিধানিক শূন্যতার ‘আশঙ্কায়’ আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণে রাজি হয়নি বিএনপি। দলটি সময় নেওয়ার কৌশল নিলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতারা রাষ্ট্রপতিকে সরাতে অনড় অবস্থানেই রয়েছেন।
অন্তর্র্বতী সরকার এবং ছাত্র নেতৃত্বের সূত্র সমকালকে আরও জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের সব শক্তির ঐক্যের স্বার্থে বিএনপিকে রাজি করাতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলবে। তা সফল না হলেও সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গভবন ছাড়া করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতির অপসারণে রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য ছাত্রনেতারা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেলসহ জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকের পর বিএনপি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি। ছাত্রনেতারা জানান, দলীয় ফোরামে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি। তবে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের চেয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন নিশ্চিতেই আগ্রহ তাদের
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে সরকারের অনড় অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্যেও। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হলেও মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সরানো হবে বলে আভাস দিয়ে তিনি নিজের ফেসবুকের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘৮ দিবস বাতিল কিংবা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদ অকপটে নিয়েছে, যাদেরকে অনেকেই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে না বলে অপবাদ দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রমিনেন্ট রাজনৈতিক দলকেও আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেসি করতে দেখা গেছে, ফ্যাসিবাদের সর্বশেষ আইকনকে সরানোর ক্ষেত্রেও অনীহা দেখা গেছে।’
বিএনপির সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যার ব্যর্থ বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে আসিফ লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত, সামষ্টিক ক্ষোভ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনা হোক, পাবলিক প্ল্যাটফর্মে কাউকে বিব্রত করা কিংবা তা করতে গিয়ে নিজেকে খেলো করা দুঃখজনক।’
উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে অভ্যুত্থানের পরের রোডম্যাপ হিসেবে পাঁচ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল এই অ্যাকাউন্ট থেকেই। সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রথম অভিপ্রায় গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দই দেখিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রমিনেন্ট দলের সায় না পাওয়ায় সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।’
এর আগে দুপুরে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে দলটির পুরানা পল্টন কার্যালয়ে বৈঠকে করেন ছাত্রনেতারা। এই দলটিও জামায়াতে ইসলামীর মতো অবস্থান নিয়েছে। দুটি দলের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পক্ষে তারা। বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে সরাতে রাজি হলে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনও প্রকাশ্যে একই অবস্থান নেবে। তবে, আগ বাড়িয়ে এমন কিছু করবে না, যাতে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা যায়।
গুলশানের বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তেজগাঁওয়ে পৃথক কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে দলটির অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘সাহাবুদ্দিন ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও তাঁর পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না। অনেক চিন্তা করে কাজ করতে হবে। বড় শূন্যতা হলে ভরাট করা মুশকিল। শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট, বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ ও বাইরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মেতে উঠবে।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক ছাত্রনেতা বলেছেন, ‘বিএনপিসহ অন্যান্য দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাষ্ট্র সংস্কারের। এর জন্যই মানুষ জীবন দিয়েছে অভ্যুত্থানে। এখন দলগুলো যদি কম্প্রোমাইজ করে, তা প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয়। ব্যাপারটি (রাষ্ট্রপতির অপসারণ) শুধু আদর্শিক নয়, বাস্তবিক (প্রয়োজন)।’
একাধিক ছাত্রনেতা জানিয়েছেন, বৈঠকে বিএনপি নেতারা কথা বলেছেন কম। তারা ছাত্রনেতাদের কথা শুনেছেন। সংবিধান পুনর্লিখনের মতো বড় শক্তি ছাত্র নেতৃত্ব কিনা– এ প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। রাষ্ট্রপতির অপসারণের আলোচনার চেয়ে নির্বাচনের বিষয়ে জোর দেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা সমকালকে জানান, অন্তর্র্বতী সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিয়ে একের পর এক ইস্যু তৈরি করছে, যাতে নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। আবার ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধেও জড়াবে না। আলোচনা চালিয়ে যাবে। বরং তাদের বিএনপির অবস্থান এবং দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা চলবে।
সূত্রের খবর, বিএনপির ধারণা সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করলে ড. ইউনূস নির্বাহী ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতি হবেন। এতে সর্বময় ক্ষমতা তাঁর হাতে চলে যাবে। ছাত্র নেতৃত্ব তাঁর মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। সে ক্ষেত্রে সাবেক একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন– এমন গুঞ্জন রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সমর্থন করা সেই কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর কোনোটিই বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেছেন, ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতি হবেন না। বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম প্রস্তাব করলে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সাহাবুদ্দিনকে আর রাখা হবে না। তিনি টিকে গেলে সরকার এবং ছাত্র নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন সমকালকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর দোদুল্যমানতা না রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
বৈঠকের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা কবে কীভাবে করা যায়, এ নিয়ে কথা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে কীভাবে করতে পারি এবং সংকট কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছি। জাতীয় ঐক্য নিয়েও কথা হয়েছে। বিএনপি নেতারা কথা শুনেছেন। তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে কথা বলবেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, শুক্রবার জামায়াতের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তারা একমত প্রকাশ করে বলেছে, ‘নৈতিক জায়গা থেকে সাহাবুদ্দিনের পদে থাকার গ্রহণযোগ্যতা নেই।’ ইসলামী আন্দোলনও একই কথা বলেছে। তারা দ্রুততম সময়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায়।
নাসীরউদ্দীন এ সময় বলেন, ‘চুপ্পু মাস্ট বি গন (চুপ্পুকে অবশ্যই যেতে হবে)। তবে আমরা টাইম ফ্রেম বেঁধে দিচ্ছি না।’
আজ রোববার গণতন্ত্র মঞ্চে, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ছাত্রনেতারা। সূত্র জানায়, তাদের অবস্থানও জামায়াত এবং ইসলামীর আন্দোলনের মতো। বিএনপি সম্মত হলে তারাও রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে রাজি। তবে বিএনপির মতোই তারাও নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে– এমন কিছুতে সম্মত হবে না।
এদিকে রিজভী গতকাল বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার, তা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। তিনি ভারতের পালিয়ে যাওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তিনি তা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই।
এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সরকার ও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতৃত্ব। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গ করে পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিও একই অবস্থান নিয়েছে। তবে গত বুধবার বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে জানান, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির আশঙ্কায় তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণ চান না।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর জানানো হয়, তাড়াহুড়ো নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অপসারণে সিদ্ধান্ত হবে। এ আলোচনা কবে ডাকা হবে, তা এখন নির্ধারিত হয়নি। প্রথম ধাপে ছাত্রনেতারা আলোচনা করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, গতকালের বৈঠকে আগের চেয়ে নমনীয় ও কৌশলী ছিলেন বিএনপি নেতারা।
সরকারি সূত্রের ভাষ্য, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রশ্নে সরকারও অনড় অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর চেষ্টা করা হবে। গত শুক্রবার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসভবনে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঐকমত্য না হলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। শেষ বিকল্প হবে, সরে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে তিনি দেশ ছাড়ার পর পদত্যাগপত্র পাঠাবেন। বিনিময়ে আইনি ‘ঝামেলা’ থেকে মুক্তি পাবেন।
বিএনপির সঙ্গে গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ, নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামন্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব।
সাংবিধানিক শূন্যতার ‘আশঙ্কায়’ আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণে রাজি হয়নি বিএনপি। দলটি সময় নেওয়ার কৌশল নিলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতারা রাষ্ট্রপতিকে সরাতে অনড় অবস্থানেই রয়েছেন।
অন্তর্র্বতী সরকার এবং ছাত্র নেতৃত্বের সূত্র আরও জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের সব শক্তির ঐক্যের স্বার্থে বিএনপিকে রাজি করাতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলবে। তা সফল না হলেও সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গভবন ছাড়া করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতির অপসারণে রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য ছাত্রনেতারা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেলসহ জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকের পর বিএনপি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি। ছাত্রনেতারা জানান, দলীয় ফোরামে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি। তবে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের চেয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন নিশ্চিতেই আগ্রহ তাদের
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে সরকারের অনড় অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্যেও। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হলেও মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সরানো হবে বলে আভাস দিয়ে তিনি নিজের ফেসবুকের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘৮ দিবস বাতিল কিংবা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদ অকপটে নিয়েছে, যাদেরকে অনেকেই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে না বলে অপবাদ দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রমিনেন্ট রাজনৈতিক দলকেও আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেসি করতে দেখা গেছে, ফ্যাসিবাদের সর্বশেষ আইকনকে সরানোর ক্ষেত্রেও অনীহা দেখা গেছে।’
বিএনপির সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যার ব্যর্থ বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে আসিফ লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত, সামষ্টিক ক্ষোভ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনা হোক, পাবলিক প্ল্যাটফর্মে কাউকে বিব্রত করা কিংবা তা করতে গিয়ে নিজেকে খেলো করা দুঃখজনক।’
উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে অভ্যুত্থানের পরের রোডম্যাপ হিসেবে পাঁচ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল এই অ্যাকাউন্ট থেকেই। সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রথম অভিপ্রায় গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দই দেখিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রমিনেন্ট দলের সায় না পাওয়ায় সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।’
এর আগে দুপুরে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে দলটির পুরানা পল্টন কার্যালয়ে বৈঠকে করেন ছাত্রনেতারা। এই দলটিও জামায়াতে ইসলামীর মতো অবস্থান নিয়েছে। দুটি দলের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পক্ষে তারা। বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে সরাতে রাজি হলে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনও প্রকাশ্যে একই অবস্থান নেবে। তবে, আগ বাড়িয়ে এমন কিছু করবে না, যাতে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা যায়।
গুলশানের বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তেজগাঁওয়ে পৃথক কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে দলটির অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘সাহাবুদ্দিন ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও তাঁর পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না। অনেক চিন্তা করে কাজ করতে হবে। বড় শূন্যতা হলে ভরাট করা মুশকিল। শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট, বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ ও বাইরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মেতে উঠবে।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক ছাত্রনেতা বলেছেন, ‘বিএনপিসহ অন্যান্য দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাষ্ট্র সংস্কারের। এর জন্যই মানুষ জীবন দিয়েছে অভ্যুত্থানে। এখন দলগুলো যদি কম্প্রোমাইজ করে, তা প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয়। ব্যাপারটি (রাষ্ট্রপতির অপসারণ) শুধু আদর্শিক নয়, বাস্তবিক (প্রয়োজন)।’
একাধিক ছাত্রনেতা জানিয়েছেন, বৈঠকে বিএনপি নেতারা কথা বলেছেন কম। তারা ছাত্রনেতাদের কথা শুনেছেন। সংবিধান পুনর্লিখনের মতো বড় শক্তি ছাত্র নেতৃত্ব কিনা– এ প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। রাষ্ট্রপতির অপসারণের আলোচনার চেয়ে নির্বাচনের বিষয়ে জোর দেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা সমকালকে জানান, অন্তর্র্বতী সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিয়ে একের পর এক ইস্যু তৈরি করছে, যাতে নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। আবার ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধেও জড়াবে না। আলোচনা চালিয়ে যাবে। বরং তাদের বিএনপির অবস্থান এবং দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা চলবে।
সূত্রের খবর, বিএনপির ধারণা সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করলে ড. ইউনূস নির্বাহী ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতি হবেন। এতে সর্বময় ক্ষমতা তাঁর হাতে চলে যাবে। ছাত্র নেতৃত্ব তাঁর মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। সে ক্ষেত্রে সাবেক একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন– এমন গুঞ্জন রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সমর্থন করা সেই কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর কোনোটিই বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতি হবেন না। বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম প্রস্তাব করলে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সাহাবুদ্দিনকে আর রাখা হবে না। তিনি টিকে গেলে সরকার এবং ছাত্র নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর দোদুল্যমানতা না রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
বৈঠকের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা কবে কীভাবে করা যায়, এ নিয়ে কথা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে কীভাবে করতে পারি এবং সংকট কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছি। জাতীয় ঐক্য নিয়েও কথা হয়েছে। বিএনপি নেতারা কথা শুনেছেন। তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে কথা বলবেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, শুক্রবার জামায়াতের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তারা একমত প্রকাশ করে বলেছে, ‘নৈতিক জায়গা থেকে সাহাবুদ্দিনের পদে থাকার গ্রহণযোগ্যতা নেই।’ ইসলামী আন্দোলনও একই কথা বলেছে। তারা দ্রুততম সময়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায়।
নাসীরউদ্দীন এ সময় বলেন, ‘চুপ্পু মাস্ট বি গন (চুপ্পুকে অবশ্যই যেতে হবে)। তবে আমরা টাইম ফ্রেম বেঁধে দিচ্ছি না।’
আজ রোববার গণতন্ত্র মঞ্চে, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ছাত্রনেতারা। সূত্র জানায়, তাদের অবস্থানও জামায়াত এবং ইসলামীর আন্দোলনের মতো। বিএনপি সম্মত হলে তারাও রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে রাজি। তবে বিএনপির মতোই তারাও নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে– এমন কিছুতে সম্মত হবে না।
এদিকে রিজভী গতকাল বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার, তা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। তিনি ভারতের পালিয়ে যাওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তিনি তা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই।
এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সরকার ও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতৃত্ব। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গ করে পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিও একই অবস্থান নিয়েছে। তবে গত বুধবার বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে জানান, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির আশঙ্কায় তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণ চান না।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর জানানো হয়, তাড়াহুড়ো নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অপসারণে সিদ্ধান্ত হবে। এ আলোচনা কবে ডাকা হবে, তা এখন নির্ধারিত হয়নি। প্রথম ধাপে ছাত্রনেতারা আলোচনা করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, গতকালের বৈঠকে আগের চেয়ে নমনীয় ও কৌশলী ছিলেন বিএনপি নেতারা।
সরকারি সূত্রের ভাষ্য, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রশ্নে সরকারও অনড় অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর চেষ্টা করা হবে। গত শুক্রবার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসভবনে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঐকমত্য না হলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। শেষ বিকল্প হবে, সরে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে তিনি দেশ ছাড়ার পর পদত্যাগপত্র পাঠাবেন। বিনিময়ে আইনি ‘ঝামেলা’ থেকে মুক্তি পাবেন।
বিএনপির সঙ্গে গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ, নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামন্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব।